
বাংলাদেশের সিরিজ জয় এখন হাতের মুঠোয়। সিলেট টেস্ট জিতে এগেয়ে থাকা বাংলাদেশ জিততে চায় মিরপুরেও। যেটা করতে পারলে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি হোয়াইটওয়াশ করা যাবে নিউজিল্যান্ডকে। যা বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতা সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। তবে, বাংলাদেশ যেটা চাইছে তার আশা করাটার যোক্তিকতা এ পর্যন্ত প্রমান করতে পেরেছে বাংলাদেশের বোলাররা। কঠিন ব্যাটিং কন্ডিশনে প্রথম ইনিংসের স্কোরটা বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। তবে, প্রথম ইনিংসের ১৭২ রানের স্কোরটা খারাপ মনে হচ্ছে না, বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের ৫৫ রানে ৫ উইকেট পরার পর।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড: বাংলাদেশ-১৭২/১০ (৬৬.২),
মুশফিকুর রহিম-৩৫ (৮৩), শাহাদাত হোসেন-৩১ (১০২), গ্লেন ফিলিপস-১২-৩১-৩, মিশেল স্যান্টনার-২৮-৬৫-৩,
নিউজিল্যান্ড-৫৫/৫ (১২.৪),
কেন উইলিয়ামসন-১৩ (১৪), মেহেদী হাসান মিরাজ-৬-১৭-৩, তাইজুল-৫.৪-২৯-২
আগে ব্যাট করে ৪৬ ওভার ২ বলেই ১৭২ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস। গামিনি ডি সিলভার তৈরি মিরপুরের কন্ডিশনে ব্যাট করাটা সহজ ব্যাপার নয়। সব প্রফেশনাল দলই খেলেছেন এই কন্ডিশনে। তবে, সফল হতে পারেননি খুব বেশি দল। অস্ট্রেলিয়া. ইংল্যান্ড ভারত সবাই এই কন্ডিশনে নাস্তাবাবুদ হয়েছেন। যার ফায়দা তুলে বাংলাদেশ জিতেছে অনেক বড় ম্যাচ। যার অনুলিপি হয়তো তৈরি হতে যাচ্ছে মিরপুর টেস্টেও। বৃষ্টি বড় বাধা না হলে এই কন্ডিশনে জয় পরাজয় আশা সময়ের ব্যাপার
টস জিতে আগে ব্যাটে নেমে মাহমুদুল হাসান জয় আর জাকির হোসেন ভাল শুরু এনে দিতে পারেননি। মাহমুদুল হাসান জয় ৪০ বলে ১৪ আর জাকির হোসেন ২৪ বলে ৮ রান করে ফিরে গেছেন। স্পিনার স্বর্গ এই কন্ডিশনে দুজনই আউট হয়েছেন স্পিনে। মাহমুদুল হাসান জয় নাস্তাবাবুদ হয়েছেন এজাজ প্যাটেলের বলে আর জাকির হোসেন মিশেল স্যান্টনারের বলে। নির্বাচকদের সুনজড়ে থাকা জাকির হোসেন প্রথম টেস্টের পর দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ব্যর্থ। শেস ইনিংসে ভাল কিছু করতে না পারলে হতাশার একটি সিরিজ হতে চলেছে তার জন্য।
অপরদিকে, অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্তও হাল ধরেতে পারেনি কঠিন কন্ডিশনে। মিশেল স্যান্টনারের স্পিন বুঁঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেছেন ১৪ বলে ৯ রান করে। আরেক টেস্ট ভরসা মুমিনুল হকও এজাজ প্যাটেলের বলে ১০ বলে ৫ রান করে ফিরেছেন। ফলে ৪৭ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মুশফিকুর রহিম আর শাহাদাত হোসেন মিলে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা চালিয়েছেন।
তবে বিপত্তি বাঁধে মুশফিকুর রহিমের এক ভূতুড়ে আউটে। ক্রিকেট ইতিহাসে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে অবস্ট্রাকটিং দি ফিল্ড আউট হয়ে ফিরেছেন তিনি। কাইল জ্যামিসনের এক বাউন্সে ডিফেন্স করেছিলেন তিনি। বল ব্যাটে লেগে বাউন্স হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে অসাবধানতা বসত হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন । বলটি এতটা দুরে ছিল যে, তিনি হাত না লাগালেও সমস্যা হত না। অযাথা হাত দিয়ে বল সরিয়ে দেয়ায় ছোট করে আবেদন করেন নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। মাঠের আম্পায়ার থার্ড আম্পায়ারকে কল করায়, যাচাই করে আউটের সিদ্ধান্ত জানান থার্ড আম্পায়ার আহসান রাজা। ফলে মুশফিককে ৮৩ বলে ৩৫ রান করে ফিরতে হয় মুখ লুকিয়ে।
কঠিন কন্ডিশনে এমন আউট তা আবার মুশফিকের কাছ থেকে সহজে মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। কমেন্ট্রি বক্স থেকে শুরু করে, সামাজিক মাধ্যম সব জায়গায় মুশফিকের আউট হওয়ার ধরন নিয়ে সমোলোচনা হয়েছে। মুশফিকের আউটের পর মুশফিককে সঙ্গ দেয়া শাহাদাত হোসেন আউট হয়েছেন ১০২ বলে ৩১ রান করে। সাথে মেহেদী হাসান মিরাজ কিছুটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন, তবে মিশেল স্যান্টনারের ঘুর্ণিতে কাঁটা পড়েন ২০ রান করেই। সুযোগ পাওয়া নুরুল হাসান সোহানও নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে ১৬ বলে ৭ রানেই ফিরে গেছেন।
শেষ দিকে নাইম হাসান আর শরীফূল ইসলামের ১৩ ও ১০ রানের দুটি ডাবল ফিগার ইনিংসের সুবাদে ১৭২ রান পর্যন্ত পৌঁছে বাংলাদেশের ইনিংস। তবে, বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি মুশফিকুর রহিমের অবস্ট্রাইকিং আউটটি। টিম ম্যানেজমেন্টের আফসোসের জায়গা মুশফিক আর কিছুক্ষণ থাকলে দলের স্কোর আরও বড় হতে পারত। মুশফিক নিজেও হয়তো সেই আক্ষেপেই পুড়েছেন। তবে, সবই তো ক্রিকেটের অংশ।
স্পিন সহায়ক পিচের পূরো সুবিধা তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড স্পিনাররা। টিম সাউদির ১ উইকেট আর মুশফিকের অমন আউটের পর বাকি ৮ উইটের সব কয়টি স্পিনারদের। গ্লেন ফিলিপস ১২ ওভারে ৩১ রান দিয়েই নিয়ে গেছেন ৩ টি উইকেট। মিশেল স্যান্টনার ২৮ ওভার বোলিং করে ৬৫ রান দিয়ে সমান ৩ টি উইকেট নিয়েছেন। বাকি দুটি এজাজ প্যাটেলের ভাগে। এমন কন্ডিশন পেয়ে নিউজিল্যান্ডের স্পিনাররা যেন একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিদ্বন্দিতায় নেমেছিলেন। বাংলাদেশী ব্যাটারদের টালমাটাল অবস্থা দেখে হয়তো নিজেরা নিজেকেই বাহবাহ দিচ্ছিলেন।
বাংলাদেশকে ১৭২ রানে গুঁটিয়ে ফেলার পর নিউজিল্যান্ড হয়তো কল্পনা করতে পারেনি তাদের জন্যও কি অপেক্ষা করছে। আলোক স্বল্পতার কারনে দিনের ওভার শেষ করতে না পারলেও মাত্র ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছে নিউজিল্যান্ড। ফলে, লিড নেয়া তো দুরের কথা বাংলাদেশের সংগ্রহের কাছাকাছি পৌঁছানো টাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথম টেস্টের মত এই টেস্টেও ব্যর্থ টম লাথাম ২০ বল খেলে ৪ রান করে ফিরেছেন। ওপেনিং সঙ্গী ডেভন কনওয়েও থমকে গেছেন ১৪ বলে ১১ রান করে। সবচেয়ে বড় শিকার কেন উইলিয়ামসনকে ফিরিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্যাভিলিয়নে ফেরত যাওয়ার আগে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি উইলিয়ামসন। ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে এখন খাঁদের কিনারায় আছে নিউজিল্যান্ড দল।
নিউজিল্যান্ড দলের ৫ টি উইকেটের ৫ টিই নিয়েছে বাংলাদেশী স্পিনাররা। মেহেদী হাসান মিরাজের জালে ফাঁদে পড়েছেন কিউই তিন ব্যাটার আর তাইজুলের ভেলকিতে পড়েছেন ২ জন। স্পিন স্বর্গ উইকেটে তাইজুল, মিরাজরা অপেক্ষায় আছেন দ্রুত বাকিদের ফেরাতে।
তবে, দ্বিতীয় দিন মাঠে গড়ায়নি কোন বলই। সারাদিন বৃষ্টি থাকায় অম্পায়ারা দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।ফলে,উত্তেজনাকর এক ম্যাচের ফলাফল পেতে দেরি হচ্ছে। মিরপুরের পিচের যা অবস্থা আর ২ দিন খেলা হলেই ম্যাচর হার জিত নিশ্চিত হতে পারে। প্রকৃতি বৈরিতা না করলে স্পিন ভেলকি দেখা যাবে পুরো ম্যাচ জুড়েই।
how to buy priligy in usa Endocr Rev 23, 303 326 2002