অনুর্ধ-১৯ এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

ban-vs-ind-cricket-19

অনুর্ধ-১৯ এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ। আজ দুবাইয়ে মাঠে অনুষ্ঠিত  সেমিফাইনালে ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট হলেও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়টি এমন সময়ে এল, যখন দুদেশের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে ভক্ত সমর্থকদের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কেও টানাপোড়ন চলছে।  আগামী ১৭ ডিসেম্বর ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ট্রফি জিততে মাঠে নামবে যুবারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত-১৮৮/১০ (৪২.৪), মুরুগান অভিষেক-৬২ (৭৪),মারুফ মৃধা-১০-৪১-৪,
বাংলাদেশ-১৮৯/৬ (৪২.৫), আরিফুল ইসলাম-৯৪ (৯০), নোমান তিওয়ারি-৯-৩৫-৩ 

আজকের ম্যাচে আগে ব্যাট করা ভারত শুরু থেকেই বিপদেই ছিল। ওপেন করতে নামা আদর্শ সিং ২ আর আরশিন কুলকারনি ১ রানেই মারুফ মৃধার বলে ফিরে যান। অধিনায়ক উদয় সাহরন কোন রান না করেই মারফ মৃধার বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ১৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। যে বিপর্যয় পরবর্তীতে পূরো ইনিংস জুড়ে পোঁহাতে হয়েছে ভারতকে। 

পরে মিডল অর্ডার ব্যাটার সচীন দাস ভাল কিছুর ইঙ্গিত দিলেও ২২ বলে ১৬ রান করে বর্শনের বলে সরাসরি বোল্ড আউট হয়ে ফিরে যান। ফলে, ভারত ৩৬ রানের মাথায় ৪ উইকেট হারিয়ে বসে। তাছাড়া তিনে নামা ব্যাটার প্রিয়াংসু মলিয়া ঠান্ডা মাথায় ইনিংস এগিয়ে নিতে চাইলেও ৪৫ বলে ১৯ রান করে বর্শনের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।

প্রিয়াংসু মলিয়ার বিদায়ের পর পরই আরাভালি আভিনিশ কোন রান না করেই আউট হওয়ায় ৬১ রানের মাথায় ৬ষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বিপদ ঘনীভূত করে ভারত। তবে,বিপদ সামলিয়ে এর পরপরই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে ভারত। মুশির খানের ৬১ বলে ৫০ আর মুরুগান অভিষেকের ৭৪ বলে ৬২ রানে অনেকটা এগিয়ে যায় ভারত। ৬১ রানে ৬ উইকেট হারানো ভারতের ৭ম উইকেটটি পরে ১৪৫ রানে। তবে, মুশির-অভিষেকের প্রচেষ্টার পরও ১৮৮ রানেই থামতে হয় ভারতকে। 

বাংলাদেশের হয়ে মারুফ মৃধা ১০ ওভার বোলিং করে ৪১ রান দিয়ে ৪ ‍টি উইকেট দখল করেছেন। তাছাড়া বর্শন ২ টি আর জীবন নিয়েছেন ২ টি করে উইকেট। মাহফুজুর রহমান রাব্বীও ১ টি উইকেট দখল করেছেন। মূলত, মারুফ মৃধার ওপেনিং স্পেলেই কুপোকাত হয়ে যায় ভারত। উপরের সারির ৪ জন ব্যাটারের  ৩ জনই মারুফ মৃধার শিকার হয়ে ফিরেছেন।

তবে, ১৮৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটাও খুব একটা সুবিধার হয়নি। ৩৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে যেন ভারতকেই অনুসরন করছিল বাংলাদেশ দল। ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলী ভুল বোঝাবুঝিতে ৭ রান করে রান আউট হয়ে ফেরেন। আরেক ওপেনার জিসান আলমও কোন রান না করেই লিমবানির বলে বোল্ড আউট হয়ে ফেরেন। তিনে নামা রেজওয়ানও মাত্র ১৩ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।

পরবর্তীতে, আরিফুল ইসলাম আর আহরার আমিনের অনবদ্য ১৩৮ রানের পার্টনারশীপে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ভারত। আউট হওয়ার আগে আরিফুল ইসলাম ৯০ বলে ৯৪ রান করে ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে আউট হন। অন্যদিকে আরিফুল ইসলামকে যথেষ্ঠ সঙ্গ দেয়া আহরার আমিন ১০১ বলে ৪৪ রানের এক ম্যাচুয়ট ইনিংস খেলেন।

আরিফুল-আহরারের ১৩৮ রানের জুঁটির পরও বাংলাদেশ কিছুটা পথ হারালেও জয় পেতে অসুবিধা হয়নি বাংলাদেশের। ৪২ ওভার ৪ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য ১৮৯ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ফলে, ৪ উইকেটের এক অনবদ্য জয় দিয়েই ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলে বাংলাদেশ।

ভারতের হয়ে নোমান তিওয়ারী ৯ ওভার বোলিং করে ৩৫ রান দিয়ে ৩ টি উইকেট নিয়েছেন। তাছাড়া, রাজ লিমবানি ১০ ওভার বোলিং করে ৪৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ টি উইকেট। তবে, এতকিছুর পরও শুরুতে যে প্রেসার তৈরি করেছিল ভারত তা ধরে রাখতে না পারায় হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ভারতকে।

মূলত, বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হারের পর, বেশ কিছু বাংলাদেশী সমর্থক, অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করে উৎযাপন করে। যা পছন্দ হয়নি ভারতের। ফলে, ক্রিকেটীয় আচরনের বাহিরে গিয়ে দু-দেশের ভক্ত সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ট্রলিং হতে থাকে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। এমনকি, ভারতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশিকেও হয়রানির শিকার হতে হয় বিশ্বকাপকে ইস্যু করে। 

দুদলের ক্রিকেটীয় শক্তির অনেক পার্থক্য থাকার পরও, যেকোন সংস্করনে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ আলাদা উত্তেজনা তৈরি করে। মাঠে থাকা খেলায়াড়রাও নিজেদের উজাড় করে দিতে উদগ্রীব থাকে। ফলে, দেশের গন্ডী পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ে ম্যাচের উত্তেজনা। তাই, বয়সভিত্তিক হলেও বাংলাদেশের এই জয় বাংলাদেশকে বাড়তি অনুপ্রেরনা দিবে।

 বয়সভিত্তিক পর্যায়ের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট যেকোন দেশের ক্রিকেট পাইপ লাইনের সামর্থ্য ইঙ্গিত করে। তাছাড়া, বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দল বরাবরই ভাল করে আসছে। এমনকি, অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জয়েরও অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশ দলের। তবে, দেশের ক্রিকেট কাঠামো দুর্বল থাকায়, উদীয়মান ক্রিকেটারদের পরবর্তী উন্নয়নের জায়গায় অনেকটা ঘাটতি রয়েছে। ফলে, উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখানো অনেকেই ঝড়ে পড়ছে ক্রিকেট থেকেই। 

ঢাকা ভিত্তিক ঘরোয়া ক্রিকেট হওয়ায়, সব খেলোয়াড় সমানভাবে দলগুলোতে সুযোগ পাচ্ছে না। তাছাড়া, ঘরোয়া ক্রিকেটের দলগুলোর উপর পূর্ন নিয়ন্ত্রনও নেই বিসিবির। ফলে, ব্যক্তিগত পছন্দের খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিতে যোগ্য সম্পন্ন খেলোয়াড়রা অনেকটা আড়ালে ঢাকা পড়ছে। উদীয়মান ক্রিকেটারদের ক্রিকেটীয় উন্নয়নের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া গেলে মূল দলের জন্য ভাল ব্যাকআপ তৈরি হতে পারতো। 

যদিও, সর্বশেষ বিশ্বকাপ জয়ী বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলটিকে অনেকটা আগলে রেখেছিল বাংলাদেশ। ফলাফল, শামীম পাটোয়ারী, তৌহিত হৃদয়, শরীফুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়রা এখন বাংলাদেশ মূল দলের সদস্য। মূল দল ছাড়াও পাইপ লাইনে থাকা খেলোয়াড়রা প্রপার ট্রেইনআপ পেলে ভবিষ্যতে ভাল করার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।

ক্রিকেটের প্রতি এদেশের যুবাদের ভাল আগ্রহ থাকায়, যথেষ্ঠ সুযোগ না থাকার পরও নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারছে। তবে, ক্রিকেট যেহেতু বৈশ্বিক খেলা, ভাল কিছুর জন্য যুবাদের প্রয়োজন প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক টুর্নামেন্ট আর ভাল কোচিং স্টাফ। যা, তিলে তিলে গড়া প্রতিভাকে বিকশিত হতে সাহায্য করবে। 

দীর্ঘ সময় দায়িত্বে থাকা ক্রিকেট বোর্ডের সদস্যদের সদ্বিচ্ছাই পাড়ে বাংলাদেশ দলকে আরো অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যেতে। ক্রিকেট নিয়ে যুবাদের যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যে জেদ রয়েছে তা যাতে থমকে না যায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে। ক্রিকট কাঠামোর উন্নয়ন করতে বেশি দুর তাকানোর প্রয়োজন নেই বাংলাদেশের। শুধুমাত্র, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দিকে তাকালেই যথেষ্ঠ শিক্ষা পেতে পারে বিসিবি কর্তারা। 

4 thoughts on “অনুর্ধ-১৯ এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

মন্তব্য করুন