যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও হার বাংলাদেশের

আসন্ন বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গী হিসেবে আয়োজক থাকবে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা চিন্তা করে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে রাজি হয় বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্টের সাফল্য হিসেবে টেস্ট প্লেয়িং নেশন আয়ারল্যান্ডের সাথে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়ের রেকর্ড আছে। সেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই হারতে দেখতে হলো বাংলাদেশকে। গতকাল বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫ উইকেটের হারের স্বাদ পায়।

bangladesh-cricket-30

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিং এ বাংলাদেশের অবস্থান ৯ নম্বরে আর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৯ এ। স্থানীয় খেলোয়াড় না থাকলেও প্রবাসী খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গঠন করেছে দেশটি। দলে সুযোগ পাওয়া খেলোয়াড়েরাও খুব একটা স্বীকৃত নন। তারপরও, বাংলাদেশকে হারাতে যেন কোন স্বীকৃতির প্রয়োজন হয়না। ব্যর্থতায় ভরা একটি স্কোয়াড এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে কোন রকম লক্ষ্য ছাড়াই। বাংলাদেশের অবস্থা এতটাই নাজুক যে দলে থাকা যেকোন সদস্যই প্রত্যাশ্যার কথা জানাতে লজ্জা পাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সচরাচর সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে উপরে থাকা দলগুলো ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলে রানের বন্যা বইয়ে দেয়। সেখানে এই দলের বিপক্ষেও ক্রিকেটের বেসিক না জানা বাংলাদেশ ধুঁকল। ঘরোয়া ক্রিকেটের দলেও সুযোগ পাওয়ার মত যোগ্যতাহীন ওপেনার লিটন কুমার দাস আর সৌম্য সরকারের প্রতি দলের ভরসা আকাশচুম্বী। ভরসা আর বাস্তবতার জায়গাতো আর এক নয়, সেটাই মনে করিয়ে লিটন ১৫ বলে ১৪ আর সৌম্য সরকার ১৩ বলে ২০ রান করে ফিরেছেন। 

প্রায় দশ বছর দলের সাথে রেখেও রানে আনা যায়নি লিটন আর সৌম্যদের। প্রাপ্তি হঠাৎ কোন ম্যাচে কয়টি রান করে দিয়ে কিছুটা সামর্থ্যের প্রমান দেন। সেই প্রাপ্তিটুকুকেই পুঁজি করে বোর্ডের কাছে অটো চয়েজ খেলোয়াড় তারা। আর থাকবেই বা না কেন, দুই যুগের ও বেশি সময় ধরে একটি বোর্ডের কোন সাফল্য না থাকলেও বোর্ডের দায়িত্বে থাকা গেছে। যেখানে নিজেদের থাকা নিয়ে প্রশ্ন সেখানে অন্যদেরকে দলে না রাখার সিদ্ধান্তই বা নেন কি করে। 

অন্যদিকে, দলের মধ্যে নিজের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন আসা বাংলাদেশের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত টি-টোয়েন্টি খেললেন ১১ বলে ৩ রান করে আউট হয়ে। এর বাহিরে এসে টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট ব্যাটার না হয়েও দলে সম্মানজনক রান পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করছেন তৌহিদ হৃদয়। ১২৩ স্ট্রাইক রেটে ৪৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেছেন। যা ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় শতগুন ভাল। যা না হলে আরও বড় পরাজয় দেখতে হত বাংলাদেশকে। 

চোখের সমস্যায় ফলাথ্রু সমস্যায় ভুগছেন সাকিব। বলের প্রতি স্বাভাবিক নজর রাখতে পারছেন না তিনি। ফলে, ব্যাটে নিজের পায়ের পজিশনে পরিবর্তন এনেও সফল হননি। সাকিবের চোখের সমস্যা ঠিক কতটুকু গভীর তা নিয়ে একবারের জন্য দল এবং সাকিবের নিজের কাছ থেকেও কোন ভাল ব্যাখা পাওয়া যায়নি। ৬ রান করতে ১২ বল খেলা সাকিবও রান আউট হয়েছেন ক্লিয়ার কনসেন্ট্রেশন না থাকায়। সাকিব এভাকে কখনো রান আউট হয়েছেন কিনা 

তাছাড়রও, ব্যক্তিগত,রাজনৈতিক, ব্যাবসায়িক বিভিন্ন কাজে এখন ব্যস্ত থাকেন সাকিব। দলের সাথে খুব একটা ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহন করতে হয়না সাকিবকে। শুধুমাত্র, যেকোন সিরিজের আগে দু-একটি ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ আর গা- গরম সেসনে অংশগ্রহন করেন সাকিব। বাংলাদেশ দলের পাইপ লাইন এতটাই নাজুকযে সাকিবকে কনভেন্স করে দলের সাথে খেলাতে হচ্ছে। বিসিবির যাথে চুক্তি ভিত্তিক খেলোয়াড় হওয়া সত্বেও, বিসিবির কোন ইস্যুতেই তোয়াক্কা করা সাকিবের দ্বারা বর্তমান আউটপুট বের করে আনা ক্রিকেটীয় বাস্তবতায় কঠিন তা হয়তো বুঝবেই না বিসিবি। উল্টো সাকিবকে দলের সাথে রাখতে পারাটাকা নিজেদের জন্যও সেভ মনে করেন তারা।

অন্যদিকে, বুড়ো বয়সের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ২২ বলে ৩১ আর জাকের আলীর ৫ বলে ৯ রানে কোনমতে ১৫০ রান পেরিয়ে ১৫৩ করা গেছে ৬ উইকেট হারিয়ে। স্পিনার স্টিফেন টেইলর ৩ ওভার বোলিং করে ৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ টি উইকেট। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট থেকে সরে আসা ক্রিকেটার কোরি অ্যান্ডারসন ২ ওভার বোলিং করে উইকেটশূন্য থাকলেও মাত্র ১০ রান খরচ করেছেন।

জয়ের জন্য ১৫৪ রানের লক্ষ্য হলেও, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সহজ হওয়া কথা নয়। তবে, সেই কাজটি সহজ করে দিয়েছে বাংলাদেশী বোলারা। র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বর পজিশনে থাকা একটি বোলিং ইউনিটের বোলিং যে এতটা নির্বিশ হতে পারে তা না দেখলে বোঝার সাধ্য নেই। আইপিএল ফেরত মোস্তাফিজুর রহমানকে ২ টি উইকেট নিতে খরচ করতে হয়েছে ৪১ টি রান। সাকিব আল হাসান ৩ ওভারে ১৬ রান দিলেও উইকেটশুন্য থেকেছেন। অধিনায়ক শান্ত তাকে দিয়ে ৪ ওভারের স্পেল পূরন করতে চাননি।

অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে স্টিভেন টেইলর ২৮ আর মোনাক প্যাটেল ১২ রান করে মোটামুটি একটি ভিত্তি দাঁড় করিয়ে দিয়ে যান। সব কিছুর পরও বাংলাদেশ হাতে ম্যাচ চিল ১৫ তম ওভার পর্যন্ত। ১৪ ওভার ৫ বলে এসে ৯৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে, শেষের দিকে কোরি অ্যান্ডারসনের ২৫ বলে ৩৩ আর হারমিত সিংয়ের ১৩ বলে ৩৩ রানে ৩ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ হেরে বসে বাংলাদেশ দল। আগামী ২৩ মে সিরিজ জয় নিশ্চিত করার জন্য মাঠে নামবে যুক্তরাষ্ট্র আর বাংলাদেশ হয়তো ভাল প্রস্তুতি সারতে।

3 thoughts on “যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও হার বাংলাদেশের

মন্তব্য করুন