বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট

কঠিন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশের ক্রিকেট। ক্রিকেটে স্টাটাস পাওয়া থেকে শুরু করে ২ যুগের বেশি সময় পার করে ফেলেছে বাংলাদেশ। গত কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেছিল অনেকে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এগোনোর পরিবর্তে আবার পিছনে চলে গেছে দেশের ক্রিকেট। ঠিক কি কারনে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই দুর্দশা তার উত্তর খোঁজা শুরু হয়েছে। 

ছবি: সংগৃহীত

ক্রিকেট পাগল জাতি হয়ে ক্রিকেটে আবির্ভাব বাংলাদেশের

বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থা বুঝতে হলে একটু পিছন থেকে শুরু করতে হবে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল স্টাটাস পায় ১৯৯৭ সালের ১০ অক্টোবর। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ওয়ানডে ক্রিকেটের স্টাটাস অর্জন করে বাংলাদেশ। সেই সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা ছিল চরম পর্যায়ের। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফির ফাইনালে কেনিয়াকে হারোনোয় দেশ জুড়ে বয়ে গিয়েছিল আনন্দের বন্যা। 

খালেদ মাহমুদদের ক্রিকেট নিবেদন ছিল চরমে

আকরাম খান, আতাহার আলী খান, মিনহাজুল হক নান্নু, খালেদ মাহমুদরা তখন কার সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সেই সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে হার নিয়তি হলেও ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন নিয়ে কোন প্রশ্ন ছিল না। সেই নিবেদনকে পুঁজি করে আস্তে আস্তে আশরাফুল, মাশরাফিদের আগমন। বড় দলগুলোর বিপক্ষে বিচ্ছিন্ন কিছু অঘটন ঘটিয়ে জয় পেতে শুরু করে বাংলাদেশ। 

বড় দলগুলোর বিপক্ষে জয় আসতে শুরু করে আস্তে আস্তে

বিশ্বকাপের মত আসরে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলগুলোর বিপক্ষে জয় বাংলাদেশকে নিয়ে আলোচনার খোরাক জন্মায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সাথে যোগ হয় সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিমের মত ট্যালেন্টরা। আন্তর্জাতিক আসরে সব ধরনের খেলাধুলায় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ এই একটি খেলায় মাধ্যমে নিজেদের চেনাতে শুরু করে। 

বড় দলগুলোকে হারানোর অভ্যাসও তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের

এরপর সাকিব আল হাসানরা নিজেদের নিয়ে যেতে থাকেন দেশ সেরাদের কাতারে। আস্তে আস্তে ঢুঁকে পড়তে শুরু করেন আন্তর্জাতিক ক্রিড়া ব্যক্তিত্বেও। ফলাফল হিসেবে জয় আসতে শুরু করে বড় দলগুলোর বিপক্ষে। একটা সময় ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের মত দলগুলোর বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মত সাফল্য তৈরি করে বাংলাদেশ। 

খেলোয়াড় তৈরির পাইপ লাইন নেই বাংলাদেশে

তবে ক্রিকেটীয় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন শক্ত পাইপ লাইন। আর এটার জন্য প্রয়োজন সঠিক প্লাটফর্ম। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নয়ন না থাকায় ক্রিকেটে আসাটাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মনে করতে থাকে অনেকে। ফলে ক্রিকেটও যে একটা প্রফেশন হতে পারে এই ধারণা তৈরি করতে দেয়া সম্ভব হয়নি। 

আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন খেলোয়াড় আসার রাস্তা বন্ধ

দেশে মানসম্পন্ন কোন ঘরোয়া ক্রিকেট না থাকায় খেলোয়াড় আসার রাস্তা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। উন্নয়নশীল একটি দেশে অনিশ্চিত জীবন প্রক্রিয়ায় কেনোই বা কেউ আসতে চাইবে। আর যারা আসছে তাদের বেশিরভাগই ক্রিকেটীয় শখ থেকে। ৬৪ জেলার বাংলাদেশে ঢাকার বাহিরে থেকে খেলোয়াড় বাঁছাইয়ের কোন প্রক্রিয়াই নেই। 

ব্যর্থ নাজমুল হাসান পাপন

নাজমুল হাসান পাপন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক গুরুত্বপূর্ন সময়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যে সময়টাতে বাংলাদেশ একটা উদীয়মান ক্রিকেট দলের দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল। আর্থিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট সব সময় সচ্ছল থাকায় চাইলে খেলোয়াড় নিয়ে আসার বিভিন্ন প্লাটফর্ম তৈরি করা যেত। কিন্তু সেটা না করে ঢাকা কেন্দ্রিক খেলোয়াড় বাঁছাইয়ের প্রক্রিয়ায় হাঁটে বাংলাদেশ। 

ব্যক্তিগত মালিকানাধীন দলগুলোই বাংলাদেশের খেলায়াড় তৈরির মাধ্যম

তবে ঢাকার ক্লাবের আওতাধীন দলগুলোর প্রতি কোন নিয়ন্ত্রন নেই বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ডের। ক্লাবের দলগুলোর হয়ে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স সন্তোষজনক হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার রাস্তা সহজ হতে থাকে ক্রিকেটারদের। আর জাতীয় দলের রাডারে আসা খেলোয়াড়দের দায়িত্ব দেয়া হয় উচ্চ বেতনে বাহিরে থেকে আনা কোচিং স্টাফদের। 

ক্রিকেটের বেসিকেই জানেননা ক্রিকেটাররা

কিন্তু ক্রিকেটীয় বেসিক তৈরি করে দলে আসতে পারলে যেকোন কোচের কোচিং করানোটা যে সহজ হয় সেকথা ভুলে যেতে থাকে বাংলাদেশ। খেলোয়াড় তৈরির পরিবর্তে খেলোয়াড়দের কোচিং করিয়ে পাক্কা খেলোয়াড় তৈরির মন্ত্র নেয় বিসিবি। ক্রিকেটীয় উন্নয়নে খরচ না করে ৯০০ কোটি টাকার এফডিআরও করে ফেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। 

অন্ধকারের পথে দেশের ক্রিকেট

ফলে যা হবার তাই হয়েছে ‍উন্নতির পরিবর্তে আবার পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সাকিব, মুশফিকদের অবসরের দাঁড় গোড়ায় দাঁড়িয়ে দলে ঢোকার মত খেলোয়াড় সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশ। পাইপ লাইনে খেলোয়াড় না থাকায় অযোগ্য খেলোয়াড়দের দিয়েই টানতে হচ্ছে দেশের ক্রিকেটের হাল। নেপালের মত দলগুলোও আস্তে আস্তে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় বাংলাদেশের ক্রিকেট হয়তো শুরুর পর্যায়ে ফিরে যাবে তবে থাকবে না শুরুর মত ক্রিকেট উন্মাদনা।

মন্তব্য করুন