আইপিএল নিলামে চোখ বিশ্ব ক্রিকেটের

ipl-16

আগামী ১৯ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে আইপিএল নিলাম। দুবাইয়ের কোকা কোলা এরেনায় আইপিএল নিলামে নাম দেয়া সব খেলোয়াড়ার কাল নিজেদের ভাগ্যে দেখতে পাবে। নিলামে অংশ নিতে অপেক্ষায় থাকা সব দল নিজেদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। পছন্দের ক্রিকেটারদের দলে ভেড়াতে বড় অংকের টাকা খসাতে রাজি দলগুলো্ ফলে, অনেক চমক নিয়ে কোকা কোলা এরেনা অপেক্ষা করছে তা ধরে নেয়া্ই যায়।

এদিকে, শেষ মূহুর্তে এসে কিছু খেলোয়াড় আইপিএলের নিলাম থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে  নিলেও, সে তালিকা লম্বা নয়। বাংলাদেশ থেকে নিলামে নাম দেয়া তাসকিন আহমেদ আর শরীফুল ইসলাম শেষ মূহুর্তে এসে নিলাম থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া সাকিব আল হাসান আর লিটন দাস আগেই নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়ায়, এবারের আইপিএলে মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া আর  কেউই থাকছে না। 

খবর রটেছে মোস্তাফিজুর রহমানের বিষয়ে ৬ টি দলের আগ্রহ রয়েছে। তবে, এই বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান  যদি দল না পান, তবে এবারের আইপিএল বাংলাদেশী কোন খেলোয়াড় ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে। ফলে, বাংলাদেশ থেকে আগ্রহ হারাতে পারে আইপিএল। মোস্তাফিজুরের সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স আশানুরুপ না হওয়ায়, দল পাওয়া  নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে।

আইপিএলে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে প্রায় সব সিজনে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সাকিব। গত বছর বিসিবির কাছ থেকে অনুমতি না মেলায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা হয়নি সাকিবের। দল ধরে রাখার মিশনে সাকিবকে ধরে রাখতে চায়নি কলকাতা। পাশাপাশি, জাতীয় নির্বাচন সহ জাতীয় দলের হয়ে সময় দিতে এবারের নিলাম থেকে নাম প্রত্যাহার করেন সাকিব। ফলে, আর কখনও সাকিবকে আইপিএলে নাও দেখা যেতে পারে। 

আইপিএলে পূর্ন সময়ে অংশ নিতে আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সাউথ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড বোর্ড তাদের খেলোয়াড়দের বিষয়ে বিসিসিআইকে নিশ্চিত করেছে। শুধুমাত্র, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কা তাদের খেলোয়াড়দের ছাড়তে বিসিসিআইকে শর্ত বেঁধে দিয়েছে। মূলত, আইপিএল চলাকালীন সময়ে নিজেদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকায় দলগুলোর এই সিদ্ধান্ত। 

অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়া থেকে জশ হ্যাজলউড ছাড়া বাকি সব খেলোয়াড়দের পূর্ন সময়ের জন্য পাচ্ছে। তাছাড়া, আগামী ২১ থেকে ২৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেট শে-ফিল্ডের ফাইনাল রয়েছে। ফাইনালে কেউ অংশ নিতে চাইলে আইপিএল কতৃপক্ষকে ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তবে, কেউ শে-ফিল্ডের ফাইনালে অংশ না নিয়ে আইপিএল খেলতে চাইলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে কোন বাঁধা থাকবে না। 

অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড তাদের খেলোয়াড়দের ছাড়ার বিষয়ে কিছু শর্ত দিয়েছে। আগামী ৩০ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে টেস্ট ম্যাচ থাকায় বেশি কিছু খেলোয়াড়কে উক্ত সময়ে ছাড়তে পারবে না শ্রীলঙ্কা। এমনিতেই, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটোরদের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই এবারের আইপিএল দলগুলোর। ফলে, শ্রীলঙ্কার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছে না আইপিএল দলগুা।

মূলত, আইপিএল এমন এক আসর যেখানে টাকার ছড়াছড়ি থাকে। খেলোয়াড় কেনার ব্যাপারে আইপিএলের মত অন্য কোন ফ্রাঞাইজি লিগ টাকা খরচ করে না। ফলে, সব দেশ খেকেই খেলোয়াড়েরা আইপিএলে নাম দিতে উদগ্রীব হয়ে থাকে। পাশাপাশি,  আইপিএলের নিলাম থেকে এক আসরেই কোটিপতি বনে গেছেন অনেক ক্রিকেটার। ফলে, এই আসরেও পুরাতন অনেক ক্রিকেটারের পাশাপাশি উদীয়মান ক্রিকেটাররা দল পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

প্রতিবছর অনেক খেলোয়াড় আশাতীত ভাবে চড়া দামে বিক্রি হন এই আসর থেকে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক বড় ক্রিকেটারও অবিক্রিত থেকে যান। এবারের নিলামে প্রতিটি দল আগের তুলনায় ৫ কোটি রুপি বেশি খরচ করতে পারার অনুমতি পেয়েছে। ফলে, পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গে খেলোয়াড় কেনা বেচা হতে পারে এবারের সংস্করনে। যা নিলামে থাকা খেলোয়াড়দের আরো উৎসাহিত করছে।

তবে, নিলাম শুরুর  আগেই আইপিএল বেশ কিছু চমক দিয়েছে। গুজরাট টাইটান্স থেকে হার্দিক পান্ডিয়াকে দলে ভিড়িয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। শুধু তাই নয়, নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে অধিনায়কত্বের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে হার্দিক পান্ডিয়াকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু তাদের নিয়তিম অধিনায়ক বিরাট কোহলীকে সরিয়ে ফ্যাফ ডুপ্লেসিসকে দায়িত্ব দিয়েছে।

তাছাড়া , নিলামের আগে প্রত্যেকটি দল তাদের দলের জন্য অপরিহার্য খেলোয়াড়দের রেখে দিয়ে বাকি খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিয়েছে। ফলে, দেশী এবং বিদেশী কোটার স্লট খুব বেশি খালি নেই। ফলে, এই নিলাম  থেকে অনেক নামী দামী খেলায়াড়দের দল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে, যেসব স্লট খালি রয়েছে সেখানে সেরা খেলায়াড়দের পেতে চাইবে দলগুলো। 

বিগত ২০০৮ সাল থেকে নিয়তিম আয়োজন হয়ে আচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ফ্রাঞ্চাইজি লীগের। আইপিএল থেকে অনৃপ্রানিত হয়ে তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে ছোট সংস্করনের অনেক ক্রিকেট লীগ। তবে, কোনটিই আইপিএলের ধারে কাছে আসতে পারেনি। শুরুতে একমাস ব্যাপি আয়োজিত হত এই লীগটি। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকায় এখন দুই মাসের বেশি সময় ধরে আয়োজিত হয় এই টুর্নামেন্টটির। 

বিশ্বজুড়ে আইপিএলের বাহিরে আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলিতেও থাকছে আইপিএলের ছোঁয়া। আইপিএলের দলগুলিই প্রতিনিধিত্ব করছে অন্যদেশের টুর্নামেন্টগুলিতেও। ফলে, ছোট সংস্করনের এই আসরের ভৌগলিক পরিবর্তন হলেও আইপিএলের ছায়াতলেই আসতে হচ্ছে প্রতিটি লীগকে। তবে, আইপিএল যেন সব সংস্করনের রাজা হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে।

আইপিএল নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছে যে, আন্তর্জাতিক যেকোন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের তুলনায় এর ব্র্যান্ড ভেলূ অনেক বেশি থাকছে। ক্রিকেট স্বত্ব কেনা প্রতিটি সম্প্রচার মাধ্যম মুখিয়ে থাকে আইপিএল সম্প্রচার সত্ব পাওয়ার বিষয়ে। যা বিসিসিআইকে ধনী বোর্ডের তালিকায় এক নম্বরে নিয়ে গেছে। এমনকি, আইসিসির পূর্ন নিয়ন্ত্রনও এখন চলে গেছে বিসিসিআইয়ের হাতে। 

তবে, সবকিছু ছাপিয়ে আরো একটি আইপিএল আয়োজনের দাড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে বিসিসিআই। ক্রিকেটের নানান প্রযুক্তি থেকে শুরু করে চিয়ার লিডার্সদের নাচানাচি সহ অনেক উন্মাদনা অপেক্ষা করছে এই টুর্নামেন্টটিকে ঘিরে। পূরো বিশ্ব তাকিয়ে থাকছে, উত্তেজনাকর এক ক্রিকেট  আসরের। তার আগে, যাদেরকে দলে সংযুক্ত করলে দল সহ টুর্নামেন্টটি অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যাবে, তাদের দলে নেয়ার লড়াই অপেক্ষা করছে। যে অপেক্ষা আর বেশি দুরে নয়। 

মন্তব্য করুন