স্টার্কের রেকর্ড দামের পর আইপিএলে দল পেলেন মোস্তাফিজ

starc-14

অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ২০২৪ আইপিএল নিলাম। যে নিলামে মিশেল স্টার্কের রেকর্ড দামের পর আইপিএলে দল পেলেন মোস্তাফিজুর রহমানও। ২ কোটি রুপির ভিত্তি মূল্যে দিয়ে মোস্তাফিজকে পেয়ে যায় মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। তবে, চেন্নাই ছাড়া মোস্তাফিজের ব্যাপারে আর কোন দল আগ্রহই দেখায়নি।এর আগে সানরাইজ হায়দারাবাদ, দিল্লি ক্যাপিটালস আর মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ফিজের। 

তবে, মোস্তাফিজের দল পাওয়ার আগে, এবারের আইপিএল খেলোয়াড় কিনতে রেকর্ড তৈরি করেছে। আগে থেকেই এবারের আইপিএলে রেকর্ড ডাকের সম্ভাবনা ছিল গতবছর ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার স্যাম ক্যারন সাড়ে আঠার কোটিতে দল পেয়েছিল। যা আইপিএল ইতিহাসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল। সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে সানরাইজ হায়দারাবাদ রেকর্ড ২০ কোটি ৫০ লাখে প্যাট কামিন্সকে দলে ভিড়িয়েছিল। 

তবে, প্যাট কামিন্সের সেই রেকর্ড বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি। প্যাট কামিন্সের স্বদেশী মিশেল স্টার্ক কে রেকর্ড ২০ কোটি লাখ রুপিতে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স।যা যেকোন ক্রিকেট ফ্রাঞ্চাইজি লীগে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ দাম। এমনকি গত বারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংস যেখানে প্রাইজমানি ২০ কোটি রুপি পেয়েছিল, মিশেল স্টার্কের দাম তার থেকেও বেশি।

প্যাট কামিন্স আর মিশেল স্টার্কের এত দামের পরও কেউ অবাক হয়নি। আগে থেকেই এই দুজনের বিষয়ে আগ্রহ তুঙ্গে ছিল দলগুলির। তাছাড়া, ভারতে সর্বশেষ ‍ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়, অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি দলগুলো নজর রেখেছিল। একজন খেলোয়াড়কে কিনতে এত টাকা ব্যয় একটু বাড়াবাড়ি মনে হলেও কাঙ্খিত খেলোয়াড়কে দলে পেতে দলগুলোর কাছে যেন এটা কিছুই না। মিশেল স্টার্ক জাতীয় দলকে প্রাধান্য দিয়ে বেশ কয়েক সিজনে আইপিএল নিলাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল।তবে, এবারের নিলামে নাম দিয়ে বাজিমত করলেন এই অস্ট্রেলীয়।

অপরদিকে, ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতবে কাঁদিয়ে ম্যাচ জেতানো ট্রাভিস হেড বড় দাম পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তাকে দলে ভেড়ানো সানরাইজ হায়দারাবাদকে খরচ করতে হয়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখ রুপি। তুলনামুলক বিচারে যা কাঙ্খিত দরের চেয়ে অনেক কম বলে মনে করছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। তাছাড়াও, ইংলিশ ব্যাটার হ্যারি ব্রুককে ৪ কোটি রুপিতেই পেয়ে গেছে দিল্লি ক্যাপিটালস।

তাছাড়াও উইন্ডিজ পাওয়ার রভম্যান পাওয়েল কে নিতে রাজস্থান রয়্যালসে খসাতে হয়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ রুপি। লঙ্কান অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গাকে দলে পেতে ১.৫ কোটি খরচ করেছে সানরাইজ হায়দারাবাদ। বিশ্বকাপে নিজেকে চেনানো রাচিন রবীন্দ্র ১ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে চেন্নাইয়ের কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন। রাচিন রবীন্দ্রকে নিয়ে যেরকমটা আশা করা হয়েছিল অবশ্য সেভাবে দলগুলো আগ্রহ দেখায়নি।

এদিকে, বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা শার্দুল ঠাকুর ৪ কোটি রুপিতে চেন্নাই সুপার কিংসে গেছেন। সর্বশেষ বিশ্বকাপে ভারতের হযে দলে ছিলেন শার্দল ঠাকুর। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে ৫০ লাখ রুপিতে দলে নিয়েছে গুজরাট টাইটান্স। তাছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকান তরুন জেরাল্ড কোয়েৎজিকে দলে পেতে ৫ কোটি রুপি খরচ করেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। জেরাল্ড কোয়েৎজি আফ্রিকার পেস বিভাগের গুরুত্বপূর্ন সদস্য।

আরেক ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকসকে ৪ কোটি ২০ লাখ রুপিতে দলে ভিড়িয়েছে পাঞ্জাব কিংস। তাছাড়া ট্রিস্টান স্টাবসকে মাত্র ৫০ লাখ রুপিতে দলে ভিড়িয়েছে  দিল্লি ক্যাপিটালস। তাছাড়াও চেতন সাকারিয়াকে দলে ভেড়াতে ৫০ লাখের বেশি খরচ করতে হয়নি কলকাতা নাইট রাইডার্সের। উইন্ডিজ তারকা আলজারি জোসেভকে দলে রাখতে ১১ কোটি ৫০ লাখ খরচ করতে হয়েছে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে।

তাছাড়াও, ইন্ডিয়ান ব্যাটার শাহরুখ খানকে দলে পেতে ৭ কোটি ৪০ লাখ রুপি দিতে রাজি হয়েছে গুজরাট টাইটান্স। আরেক শ্রীলঙ্কান দিলশান মাধুশাঙ্কা ৪ কোটি ৬০ লাখে চলে গেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের খেলোয়াড়ের তালিকায়। দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার রাইলি রুশোকে দলে নিতে ৮ কোটি রুপি খরচ করতে হয়েছে পাঞ্জাব কিংসকে। নিউজিল্যান্ড পেসার লুকি ফার্গসন ২ কোটি রুপিতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর তালিকায় চলে গেছেন।

তবে, এবারের আইপিএলে ভাল দামে অনেক খেলোয়াড় বিক্রি হলেও অবিক্রিত খেলোয়াড়ের সংখ্যাও কম নয়। স্টিফেন স্মিথের মত খেলোয়াড়ও অবিক্রিত থেকে গেছেন এই আসরে। স্টিফেন স্মিথ নিজের ভিত্তি মূল্যে ২ কোটি রুপি ধরলেও, কোন দলই তার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। তার স্বদেশী মিশেল স্টার্ক, প্যাট ক্যামিন্সরা রেকর্ড দামে বিক্রি হলেও, স্টিফেন স্মিথের দল না পাওয়াটা অনেকটা বিষ্ময়ের জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া, তার আরেক স্বদেশী জশ হ্যাজলউডও অবিক্রিত থেকে গেছেন। যদিও হ্যাজলউড পূরো সিজনে অ্যাভাইলেবল না থাকায় তাকে দলে নিতে চায়নি কোন দলই।

এছাড়াও জ্যামি নিশাম, কাইল জ্যামিসন, জশ ইংলিশ, ফিলিপ সল্টদের বিষয়েও আগ্রহ দেখায়নি কোন দল। আইপিএল তারকা ক্রিকেটারদের দল না পাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবছরই অনেক তারকা ক্রিকেটার অবিক্রিত থেকে যান এই আসরে। টাকার ঝনঝনাতিতে সব ক্রিকেটার এই লীগে আগ্রহ দেখালেও, দল পাওয়া সহজ নয় আইপিএলে।

সর্বোপরি, সব দলই তাদের নিজেদের দল সাজিয়ে নিতে সক্ষম হওয়ায়, এখন শুধু শুরু আইপিএলের মূলপর্ব শুরুর অপেক্ষা। আগামী ২২ মার্চ পর্দা উঠবে আইপিএল  আসর ২০২৪ এর। দল পাওয়া খেলোয়াড়েরা ভাল দাম পাওয়ায় নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবে দলকে শিরোপা এনে দিতে। পাশাপাশি,  ‍উত্তেজনাকর এক টুর্নামেন্টের আশা করছে  আইপিএল কতৃপক্ষ।

এত কিছুর মাঝে বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র একজন প্রতিনিধি থাকায় হতাশ বাংলাদেশের সমর্থকরা। মোস্তাফিজ দিল্লিতে থাকলেও নিয়মিত দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ফলে, আইপিএল আনন্দটা বাংলাদেশীদের জন্য কিছুটা বিষাদের।

3 thoughts on “স্টার্কের রেকর্ড দামের পর আইপিএলে দল পেলেন মোস্তাফিজ

মন্তব্য করুন