
জয় দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়ন শুরু করল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ২ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। গতকাল চতুর্থ দিনেই জয়ের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিল বাংলাদেশ। আজকে শুধু আনুষ্ঠানিকতাই সাড়ল বাংলাদেশ। পূরোট টেস্ট ম্যাচ জুড়েই আধিপত্য দেখানো বাংলাদেশের কিকেট ইতিহাসের বড় জয়ের একটি এই টেস্ট ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ-৩১০ ও ৩৩৮,
নিউজিল্যান্ড- ৩১৭ ও ১৮১
ফলাফল: বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: তাইজুল ইসলাম
গতকালই ১১৩ রানে ৭ উইকেট হারিয় ৩৩২ রানের লক্ষ্যে থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। তুবও শেষ ৩ উইকেট দিয়েই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল নিউজিল্যান্ড। ৭ উইকেট হারানোর পরও ড্যারেল মিশেল উইকেটে থাকায় জয়ের স্বপ্ন অমূলক ছিল না নিউজিল্যান্ডের। তবে, সেই আস্থার প্রতিদান দিনে না পারায় হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় কিউইদের।
পঞ্চম দিনে এসে স্পিনার নাইম হাসানের এক দুর্দান্ত টার্নে এলবিডব্লিউ এর ফাঁদে পড়েন ড্যারেল মিশেল। মূলত, তখনই ম্যাচের শেষ দেখে ফেলেছিল সবাই। আউট হওয়ার আগে ১২০ বলে ৫৮ রানের এক আত্মপ্রত্যয়ী ইনিংস খেলেন মিশেল। অপ স্টাম্পের অনেক বাহিরের বল এতটা টার্ন করে ভিতরে ঢুকবে তা কোনভাবেই আন্দাজ করতে পারেননি তিনি। ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দেয়ায় রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। যা নাজমুল হাসান শান্তর সেরা রিভিউ ডিসিশন গুলোর একটি।
ড্যারেল মিশেল আউটের পর ইশ সোধী শুধু বাংলাদেশের জয় কিছুটা বিলম্বিত করেছে। তার ব্যাট থেকে ২২ টি রান আসলেও ৯১ টি বল মোকাবেলা করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাইজুল ইসলামের বলে জাকির হাসানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সোধী। তবে, ইশ সোধীর ন্যায় এত সময় নেননি অধিনায়ক টিম সাউদি। মাত্র ২৪ বলে ৩৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ইশ সোধীর আগেই তাইজুল ইসলামের বলে জাকির হাসানকের ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ইসলাম এই ইনিংসেই ৩১ ওভার ১ বল করে ৭৫ রান দিয়ে ৬ টি উইকেট নিয়েছেন। এর বাহিরে নাইম হাসান ১৭ ওভার বোলিং করে ৪০ রান দিয়ে ২ টি উইকেট নিয়েছেন। পাশাপাশি, শরীফুল ইসলাম ১ টি আর মেহেদী হাসান মিরাজ ১ টি উইকেট নিয়েছেন। এই ইনিংসে ৬ উইকেটের পাশাপাশি প্রথম ইনিংসেও ৪ টি উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। স্বীকৃতি হিসেবে এই ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করে ম্যান অফ দি ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
এই জয়ের ফলে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে পয়েন্ট টেবিলের ২ নম্বরে থাকল বাংলাদেশের নাম। যদি এই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের এটিই বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল। বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় এই অবস্থান ধরে রাখা যদিও সম্ভব নয়। তারপরও, কিছু সময়ের জন্য হলেও উপরের সারিতে বাংলাদেশের নাম দেখাটা স্বস্তিরও। ২ ম্যাচের ২ টিতে জিতে পয়েন্ট টেবিলে সবার উপরে এখন পাকিস্তানের নাম।
অপরদিকে, মাঠের খেলার পাশাপাশি মাঠের বাহিরের নানা েইস্যু নিয়েও বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট সরগরম। বিশ্বকাপে হাথুরুসিংহের থাপড় কান্ডের থেকে শুরু করে সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে যোগদান আর তামিম ইকবালের সাথে ক্রিকেট ম্যানেজমেন্টের বিরোধ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেকটা ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে।
পাশাপাশি, মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদের প্রতিও কোচিং প্যানেলের অনীহা সহ নানাবিধ ইস্যুতে সরগরম বাংলাদেশের ক্রিকেট। এই পরিস্থিতিতে এই জয়ে অনেকটা হাফ ছেড়ে বাঁচল বাংলাদেশের ক্রিকেট। এই জয়ের ফলে, ইতিমধ্যে প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ। এতদিন ধরে মিরপুরের টাইগার নামে খোঁচা খেতে হলেও বাংলাদেশের এই জয়টি এসেছে সিলেটের স্পোর্টিং উইকেটে। তাই এই জয় বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু।
বিশেষ করে বাংলাদেশের সিনিয়রদর বিদায়ের পরে নতুন দল কেমন করতে পার তার একটা পরীক্ষা হয়ে গেল এই টেস্টে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে শুধুমাত্র মুশফিকুর রহিম এই ম্যাচে ছিলেন। বাকিদের বিভিন্ন কারনে দলে না থাকায় জুনিয়রদের জন্য ভাল একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল। প্রথম পরীক্ষায় সফলকার সহিত উতড়ে যাওয়া বাংলাদেশের সামনে এখন টেস্ট সিরিজ জয়ের হাতছানি। এত ভালো সুযোগ পেয়ে সেটা ভালভাবে কাজে লাগাতে চাইবে বাংলাদেশ দল।
তাছাড়া পরের টেস্ট ম্যাচটি খুবই চেনা কন্ডিশনে মিরপুরের মাঠে। যেটি কিনা বাংলাদেশের হোম গ্রাউন্ড ধরা হয়। যে মাঠে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি সাফল্য। মিরপুর বাংলাদেশকে যা দিয়েছে, বাকি সব ক্রিকেট গ্রাউন্ড এতটা দিতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে।
বাংলাদেশ দল প্রথম টেস্ট ম্যাচে যেভাবে খেলেছে, সেটা ধরে রাখতে পারলে সিরিজ জয়ের কাজটি খু্ব বেশি কঠিন হওয়ার কথা নয়। নাজমুল হাসান শান্ত, মাহমুদুল হাসান জয় আর মুশফিকুর রহিমরা যেভাবে ব্যাটিং করেছে ঠিক সেটাই দরকার মিরপুরেও। অন্যদিতে তাইজুল ইসলামের ঘুর্নি আরো কঠিন হতে পারে হোম গ্রাউন্ডে। ব্যাট বল দুটো মিলেয়ে বাংলাদেশের জন্যর্ ভাল কিছুর হাতছানি।
অন্যদিকে, প্রথম ম্যাচে হারের শিক্ষা থেকে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। এমনিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের দুই ম্যাচ খেলে দুটিতেই হেরে অনেকটা পিছনে চলে গেছে নিউজিল্যান্ড। সামনের ম্যাচটিকে নিউজিল্যান্ড অনেক সিরিয়াসলি নিবে সেটা বলাই যায়। দেড় মাসের লম্বা বিশ্বকাপ মিশন সেরেই বাংলাদেশে পাঁ রাখতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। লম্বা সময় ধরে মাঠে থাকার ধকল স্পষ্ট শরীরী ভাষায়। যেটার সুযোগ বাংলাদেশ ভালভাবে নিতে পারে।
বিশ্বকাপে স্কোয়াডে থাকা প্রায় সব সদস্যই আছে নিউজিল্যান্ড স্কোয়াডে। বর্তমান সময়টা এমন যাচ্ছে নিউজিল্যান্ডের, তারা না পারছে বিশ্রামে যেতে না পারছে মাঠে মনোযোগ বসাতে। তবে, নিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুবই প্রফেশনাল দল। সবাই নিজের দায়িত্বটা ভালভাবে জানে। সব ক্লানি কাঁটিয়ে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত তারা।
আগামী ৬ ডিসেম্বর মিরপুরে দুদল তাঁদের দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামবে। মিরপুরের মাঠে দর্শকরা অপেক্ষায় আছে, তুমুল প্রতিদ্বন্দিতা দেখার জন্য। তাছাড়া বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা থাকায় এই টেস্ট জনমনে বাড়তি আগ্রহ তৈরি করেছে। যার প্রতিফলন মাঠে থেকে টাইগারদের উৎসাহ দিয়ে দিতে চায় সমর্থকরা। আশানুরুপ সাফল্য আসলে সব ব্যর্থতা ভুলে যাবে ক্রীড়াপ্রেমীরা। আর বাংলাদেশের ক্রিকেট নাজমুল হাসান শান্তর হাত ধরে এক নতুন শুরুর দেখা।
Comparative effectiveness of weight loss interventions in clinical practice priligy reviews Normally 2 small squares or 0