নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট জয়ের স্বপ্ন

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ৭ উইকেট হাতে রেখে ২০৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখা মোটেও অন্যায় নয়। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে দুই দলেরই প্রথম ব্যাটিংস ইনিংস ভালো যায়নি। ফলে ম্যাচ দু দলের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করছে। ৭ উইকেট হাতে থাকায় বড় লিড নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাকফুটে ফেলে জয়ের চিন্তা করতে পারে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৩১০ রান করে। অপরদিকে নিউজিল্যান্ডকে ৩১০ রানের নিচে থামানো না গেলেও বড় লিড নিতে দেয়নি বাংলাদেশ। ৩১৭ রানে অলআউট হয়ে মাত্র ৭ রানের লিড পায় নিউজিল্যান্ড। ফলে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে খুব একটা রান শোধের তাড়ায় পড়তে হয়নি।

নিউজিল্যান্ড লিড নিতে পারার বড় অবদান,  কেন উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত শত রানের ইনিংস। ৪৪ রানের মাথায় দুই ওপেনার টম লাথাম আর ডেভিড কনওয়েকে ফিরিয়েছিল বাংলাদেশ দল। টম লাথাম ৪৪ বলে ২১ আর ডেভিড কনওয়ে ৪০ বলে ২০ রান করে আউট হয়েছেন। শুরুর ধাক্কায় অনুপ্রানিত হয়ে পূরো ইনিংস জুড়েই নিউজিল্যান্ড দলকে প্রেসারে রেখেছিল বাংলাদেশ দল। 

তবে স্রোতের বিপরীতে ছিলেন শুধু কেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ডের এই কিউই ব্যাটার তিনে নেমে টপ অর্ডার আর মিডল অর্ডার সঙ্গীদের নিয়ে দলকে নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০৫ বল খেলে ১০৪ রানের এক দৃঢ়চেতা ইনিংস খেলেন উইলিয়ামসন। মূলত উইলিয়ামসনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় লিড নিতে পারেনি বাংলাদেশ দল। অপরপ্রান্ত থেকে নিয়মিত উইকেট পড়লেও এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন কেন।

নিউজিল্যান্ডের বাকি ব্যাটারদের মধ্যে হেনরি নিকোলাস ৪২ বল খেলে  ১৯ রান করে আউট হয়েছেন। তবে বিপদজনক হতে থাকা ড্যরেল  মিশেল ৫৪ বলে ৪১ রান করে তাইজুল ইসলামের বলে ফিরেছেন। এছাড়া গ্লেন ফিলিপসের ৪২ আর শেষের দিকে অধিনায়ক টিম সাউদীর গুরুত্বপূর্ন ৩৫ রানের উপর ভর করে ৭ রানের লিড নিয়ে ৩১৭ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

বাংলাদেশের হয়ে ৩৯ ওভার বোলিং করে ১০৯ রান  দিয়ে ৪ টি উইকেট দখল করেছেন তাইজুল ইসলাম। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কেন উইলিয়ামসনকে সরাসরি বোল্ড আউট করে প্যাভিলিয়নে ফেরান তাইজুল ইসলাম। তাছাড়া, পার্টটাইম স্পিনার হিসেবে বোলিংয়ে আসা মুমিনুল হক ৩ টি উইকেট নিয়ে ইনিংসের টার্নিং স্পেলটি করেছেন। ভয়ংকর হতে থাকা গ্লেন ফিলিপস আর টিম সাউদীর গুরুত্বপূর্ন উইকেট দুটিও মুমিনুলের দখলে। 

৭ রানে পিছিয়ে থেকে ‍দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে দারুন দৃঢ়চেতা দেখাচ্ছে। তৃতীয় দিন শেষ করার সময় বাংলাদেশের রান ছিল ৬৮ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২১২ রান। অথচ ২৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদেই ছিল দল। মাহমুদুল হাসান জয় প্রথম ইনিংসে ৮৬ রান করলেও এই ইনিংসে ৪৬ বল খেলে ৮ রান করে আউট হয়েছেন। তবে মাহমুদুল হাসান নিজেকে আনলাকি ভাবতে পারেন। টিম সাউদির সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে ফিরতে হয়েছে মাহমুদুল হাসান জয়কে।

তবে, জয়ের ওপেনার সঙ্গী জাকির হাসান প্রথম ইনিংসের ন্যায় দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে ১২ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও  আউট হয়েছেন ১৭ রান করে। তবে, কেন উইলিয়ামসনের ন্যায় ওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন নাজমুল হাসান শান্ত। তার অনবদ্য ১৯৩ বলে ১০৪ রানের অপরাজিত ইনিংস দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ২০৫ রানের লিড নিতে পেরেছে। ১০ টি চারে সাজানো এই ইনিংসে নিঁখুত সব শর্ট খেলে দলকে বড় লিড এনে দেয়ার প্রতিশ্রতি লক্ষ্য করা গেছে নাজমুলের ব্যাটে।

তবে, বাংলাদশ দলের বড় দুর্ভাগ্য মাহমুদুল হাসান জয়ের ন্যায় রান আউট হয়ে ফিরেছেন মুমিনুল হক। অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্তর সাথে জুঁটি বেঁধে বড় লক্ষ্যের দিকে যেতে থাকা মুমিনুল কাঁটা পড়ে রান আউটের কবলে পড়ে। রান আউট হওয়ার আগে ৬৮ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে গেছেন মুমিনুল। ৩ টি ‍উইকেটের ২ টিই রান আউট হওয়ায় দিন শেষে বাংলাদেশ দলের আফসোস বাড়িয়েছে।

অপরদিকে, ৫ নম্বরে ব্যাটে নামা মুশফিকুর রহিম আর নাজমুল হাসান শান্ত দিন শেষ করেছেন ভাল অবস্থানে থেকে। মুশফিকুর রহিম ৭১ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত আছেন। ফলে, চতুর্থ দিনে নাজমুল হাসান শান্তকে নিয়ে মাঠে নামবেন মুশফিক। উইকেটে মুশফিকুর রহিমের উপস্থিতিই বাংলাদেশ দলকে ভরসা জাগাচ্ছে। উইকেটে থাকা দুইজন মিলে লম্বা একটা পার্টনারশীপ উপহার দিতে পারলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন বাংলাদেশ দলের হাতে চলে যেতে পারে।

তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ড বোলারদের এখন পর্যন্ত সফলতা এজাজ প্যাটেলের একটি উইকেট। এজাজ প্যাটেল ২৩ ওভার বোলিং করে ৯৪ রান দিয়ে জাকির হোসেনের উইকেট টি দখল করেছেন। চতুর্থ দিনে উইকেট স্লো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ইশ সোধী, এজাজ প্যাটেলরা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন। প্রথম ইনিংসে দুদলেরই স্পিনারদের সফলতা বাকি দুটি দিনে রোমাঞ্চ ছড়াতে পারে।

অন্যদিকে, সংবাদ সম্মেলনে এসে মুমিনুল হক ৪০০ রানের লিডের টার্গেটের কথা বললেন। তার মতে ৪০০ রানের লিড নিতে পারলে এই ম্যাচ জয়ের বিষয়ে আত্নবিশ্বাস তৈরি করবে তাদের মধ্যে। অপরদিকে, নিউজিল্যান্ড দল যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশকে অলআউট করে টার্গেট টা ছোট রাখতে চাইছে। শেষের ইনিংসে ব্যাটিং করাটা কষ্টকর হতে পারে এই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশকে দ্রুত অলআউট করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে নিউজিল্যান্ড।

মূলত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের অংশ হওয়ায় দুদলের কাছে এই সিরিজটি গুরুত্বপূর্ন। নিউজিল্যান্ড দল প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চ্যাম্পিয়ন দল। তবে, দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল তারা। তাই, এবারে কান দলকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না কিউইরা। তাইতো, লম্বা বিশ্বকাপ জার্নির পরও, মূল খেলোয়াড়দের বিশ্রামে না পাঠিয়ে বাংলাদেশে এসেছে তারা।

অপরদিকে, ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ দলের জন্য এই সিরিজটি আত্নবিশ্বাস বাড়ানোর। বিশেষ করে প্রথম টেস্টটি জিতে নিতে পারলে দলের মধ্যে আন্তবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্যে করবে। বিশ্বকাপে হতাশজনক পারফরম্যান্সের পর আত্নবিশ্বাসে যে চির ধরেছে, তা ফিরিয়ে আনতে পারে নিউজিল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে একটি জয়। এই টেস্টটি যে সম্ভাবনা তৈরি করেছে আন্তবিশ্বাস তৈরি হতে পারে এই ম্যাচ দিয়েই।

মন্তব্য করুন