বিশ্বকাপ জয়ের পর ইন্ডিয়ার কাছে ধরাশায়ী অস্ট্রেলিয়া

Aus-Ind-cricket-39

পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে  ২ টি ম্যাচ খেলে দুটিতেই হারতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের জ্বালার প্রতিশোধের নেশা ধরেছে ভারতীয় তরুনদের মধ্যে। শরীরী ভাষায় অস্ট্রেলিয়াকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলার প্রতিফলন। ফলাফল টাও পক্ষে গেছে ভারতের। সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন তরুন দলটি যেন ভারতের বাজির ঘোড়া। 

মূলত বিশ্বকাপ ফাইনালে শোচনীয় পরাজয়ের পর পূরো ভারতই দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছেল। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার বিষন্নতায় এই সিরিজ থেকে সরে গেছেন সিনিয়র খেলোয়াড়রা। এমনকি কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও নেই এই সিরিজে। তার জায়গায় কোচিং করাচ্ছেন ভিভিএস লাক্সম্যান। সাথে দেয়া হয়েছে পাইপ লাইনে থাকা তরুন স্কোয়াড। প্রতিপক্ষ সদ্য ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া।

বিরাট কোহলী, রহিত শর্মা, মোহাম্মদ শামীদের বিশ্রামের সুযোগে এই সিরিজ খেলছেন জাসওয়াভি জাসওয়াল, রিংকু সিং, তিলক ভর্মারা। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াডের বেশ কিছু খেলোয়াড়ও বিশ্রাম নিতে দেশে ফিরে গেছেন। প্যাট কামিন্স, মিশেল স্টার্ক আর মিশেল মার্শরা তাই এই সিরিজে অনুপস্থিত। তবে, বর্তমান দলের সাথে থাকা অস্ট্রেলিয়ান স্কোয়াডটাও বিশ্বমানের।

মিশেল মার্শরা ফিরে গেলেও স্টিফেন স্মিথ, ম্যাক্সওয়েল, মার্ক স্টয়নিস আর ফাইনালের নায়ক ট্রাভিস হেডরা আছেন টি-টোয়েন্টির স্কোয়াডে। ভারতীয় দলের সাথে তুলনায় অস্ট্রেলিয়া দলটি বেশ পরিপক্কই বলা যায়। প্রাথমিক ভাবে ভারতের বর্তমান দলটি অস্ট্রেলিয়ার কাছে কোন  পাত্তাই পাবেনা এমনটিই ভেবেছিল অনেকে। তবে সব ধারনা ভূল প্রমান করেছে ভারতীয় যুবারা। 

প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ২ উইকেটে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দলটি। ফলে, সামনের তিনটি ম্যাচের একটিতে জিততে পারলেই সিরিজ ভারতের দখলে চলে যাবে। তবে ভারত এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন দেখছে। অপরদিকে, শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে এখনো সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী অস্ট্রেলিয়া।

এবারর বিশ্বকাপেও প্রথম দুটি ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ শুরু করেছেল অস্ট্রেলিয়া। পরে দারুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ নিজেদের করে নিয়ে অজিরা। ফলে, তাজা স্মৃতিকে সঙ্গী করে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আশা মোটেও বাড়াবাড়ি নয়। অস্ট্রেলিয়ানরা জানে কিভাবে প্রতিকুল পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।

তবে, ভারতের হয়ে প্রথম ম্যাচে ঈশান কিশান, সূর্যকুমার যাদব রিংকু সিংরা ব্যাটে অনবদ্য অবদান রেখেছিলেন। অপরদিকে, দ্বিতীয় ম্যাচে জাসওয়াভি জাসওয়াল, ঋতুরাজ গাইকাট, ঈশান কিশানরাও ব্যাটে অবদ্য অবদান রেখে দলকে জিতিয়েছেন। তবে দুটি ম্যাচেই রিংকু সিং ছিলেন ব্যাটে অনবদ্য। 

রিংকু সিং প্রথম ম্যাচে ১৪ বলে ২২ রানে অপরাজিত থেকে উত্তেজনাকর ম্যাচে দলকে জিতেয়েছিলেন। আর দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ বলে ৩১ রান করে পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দেন রিংকু সিং। মূলত আইপিএলে গত আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে এক ওভারে ৫ টি ছয় মেরে আলোচনায় আসেন রিংকু। 

গত আসরে রিংকু সিং  কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ব্যাট হাতে একাই টেনেছেন। যার বদৌলতে জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ পাচ্ছেন রিংকু সিং। আর সেই সুযোগটাকে ভালভাবে কাজে লাগাচ্ছেন রিংকু। তিনি যেভাবে খেলছেন সিরিজের বাকি ম্যাচ গুলোতে সেভাবে খেলতে পারলে জাতীয় দলে নিয়মিত হওয়ার আলোচনায় চলে আসতে পারেন। ইতিমধ্যেই তাকে দলে রাখার বিষয়ে যে আলোচনাটা শুরু হয়ে গেছে।

তাছাড়াও পাইপ লাইনে থাকা জাসওয়াভি জাসওয়ালেরও পারফরম্যান্স আশা জাগানো। সিনিয়রদের বিদায়ের পর শুভমন গিলের সঙ্গী হিসেবে তার নামটি বড় করে উঠছে। জাসওয়াল নিজের ব্যাটিংয়ের গভীরতা আইপিএলে দেখিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৫ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে তিনিও লাইম লাইটে চলে এসেছেন। 

তবে, টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট খ্যাত সৃর্যকুমার যাদব দুটি ম্যাচেই অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন। প্রথম ম্যাচে ৪২ বলে ৮০ রানের ম্যাচ সেরা ইনিংসের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও ৩২ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেছেন। টি-টোয়েন্টিতে তার পারফরম্যান্সই প্রমান করে কেন তিনি এই ফরম্যাটে বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। যেকোন দলকে নিজের দিনে একাই উড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা আছে সুরিয়ার।

তবে টি-টোয়েন্টিতে সফল হলেও সুর্যকুমার যাদবের ওডিআইতে তেমন কোন সফলতা নেই। সর্বশেষ ওডিআই বিশ্বকাপেও ব্যাট করার ধরন নিয়ে সমলোচনায় পড়েছেন তিনি। ওয়ানডে ফরম্যাটে টানা তিন ম্যাচে গোল্ডেন ডাকেরও বিশ্ব রেকর্ড আছে এই ড্যাশিং ব্যাটারের। তবে, ওয়ানডেতে ব্যর্থ হলেও  টি-টোয়েন্টিতে বর্তমানে তার ধারে কাছেও কেউ নেই।

তবে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন তিলক ভর্মা। তিলক ভর্মাকে আগামী প্রজন্মের সেরা তারোকা মনে করা হলেও, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হতাশ করেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ১০ বলে ১২ রান করেন। যদিও দ্বিতীয় ম্যাচে ২ বলে ৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। তবে ব্যাটে এখন পর্যন্ত ভালভাবে নির্বাচকদের মনে দাগ কাটতে পারেননি তিলক।

ভারতের জয়ের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়া বলতে গেলে হতাশ করেছে। সদ্য বিশ্বকাপ জয়ী দলটি সব বিভাগেই ভারতের কাছে হেরে গেছে। প্রথম ম্যাচে জশ ইংলিশ ৫০ বলে ১১০ রান করলেও দলকে হারের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি। অপরদিকে, ওপেনার হিসেবে এই সিরিজে খেলা স্টিফেন স্মিথ প্রথম ম্যাচে ৪১ বলে ৫২ রানের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬ বলে ১৯ রান করেন। যা এই কন্ডিশনের জন্য মোটেও মানানসই নয়। 

অস্ট্রেলিয়া মূলত পিছিয়ে পড়েছে তাদের বোলিং লাইন আপে ভাল কম্বিনেশ না থাকায়। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইন আপেরমূল অস্ত্র মিশেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স আর জশ হ্যাজলউড কেউ এই সিরিজে নেই। শন অ্যাবট আর জেসন বেহরানড্রফ ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইন আপের সামনে যেন দিশেহারা। যা কাজে লাগিয়ে ইন্ডিয়ান ব্যাটাররা নিজেদের সেরাটা বের করে এনে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন।

তবে এই সিরিজে ইন্ডিয়ারও সেরা বোলিং লাইন আপ বিশ্রামে। জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামী, মোহাম্মদ সিরাজরা বিশ্রামে আছেন। তবে সিনিয়রদের বিশ্রামের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি মুকেশ কুমার আর আর্শদীপ সিংরা। সবাই বোলিংয়ে রান খরচায় ব্যয়বহুল থাকলেও ভারতীয় ব্যাটারদের কল্যানে এ যাত্রায় রক্ষা হয়েছে।

তবে, সার্বিক  বিবেচনায় ভারতীয় দল যেভাবে পারফরম্যান্স করেছে তা অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। এই সিরিজে ভাল করা খেলোয়াড়দের সামনে জাতীয় দলে সুযোগের পাশাপাশি আইপিএল নিলামে চড়া দামে বিক্রি হওয়ার সুযোগ থাকছে। বিসিসিআইও তাদের তরুনদের যাচাই করে নেয়ার পরীক্ষা করে নিতে পারল এই সিরিজ দিয়ে । যা রজার বিনিদের ভবিষ্যত স্টার বের করতে সহায়তা করবে। 

ভারতের এই জয়গুলো এমন সময়ে আসছে যে সময়ে পূরো ভারতবাসী বিশ্বকাপ হারানোর শোকের ছাঁয়ায়া নিমজ্জিত। এই জয়গুলো বিশ্বকাপ ব্যর্থতার দু:খ হয়তো ভোলাতে পারবে না, তবে যাদের কাছে বিশ্বকাপ হারাতে হয়েছে তাদেরক হারিয়ে সান্ত্বনা পেতে সহায়তা করবে। যদিও এই জয় বিশ্বকাপ হারানোর তুলনায় অতি নগন্য।

পাশপাশি, ভারত অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছিল অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড নিজেদের মধ্যে যে ধরনের ক্রিকেটীয় দৈরথ উপভোগ করে, তেমনি দুদলের সাথে ভারতের মুখোমুখির দৈরথটাও যেন সেরকম হয়। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অনেকটা সফল ভারত। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচেও এখন অ্যাশেজের মতই মাঠের বাহিরে এবং ভিতরে লড়াই জমে উঠে। 

তবে ভারতীয় ক্রিকেটের উত্থান যেভাবে হচ্ছে,এতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দলটি নিজেদের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে নিয়ে যেতে পারে। এশিয়ার দলগুলো থেকে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা ভারত এখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে যেকোন কন্ডিশনে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।  ক্রিকেটের প্রতি ভারতবাসীর তুমুল ভালবাসা পৃরা ক্রিকেটকেই নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। যার সুফল তারা পাচ্ছে আর্থিক লাভে আর ক্রিকেটীয় সফলতায়। ভারতের পাশাপাশি ক্রিকেট হোক পূরো বিশ্ববাসীয় এই কামনা সবার।

5 thoughts on “বিশ্বকাপ জয়ের পর ইন্ডিয়ার কাছে ধরাশায়ী অস্ট্রেলিয়া

মন্তব্য করুন