পার্থ টেস্টে হার দেখছে পাকিস্তান দল

australia-cricket-18

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থ টেস্টেস হার দেখছে পাকিস্তান দল। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে অস্ট্রেলিয়া ৩০০ রানের লিড পেয়েছে, হাতে এখনো রয়েছে ৮ টি উইকেট।পূরো দুই দিন হাতে থাকায় পাকিস্তানের পক্ষে হার এড়ানোটা অনেক কঠিন হবে। আসন্ন বাকি দুই দিন ম্যাচ বাঁচাতে হলে ব্যাটিংয়ে লম্বা সময় মাঠে থাকার বিকল্প হাতে নেই। 

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড: অস্ট্র্রেলিয়া ১ম ইনিংস-৪৮৭/১০ ও ৮৪/২,
পাকিস্তান-২৭১/১০

প্রথম ইনিংসে ডেভিড ওয়ার্নারের অনবদ্য ১৬৪ আর মিশেল মার্শের ৯০ রানে ৪৮৭ রানের বড় পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের হয়ে অভিষিক্ত আমির জামাল ১১১ রান দিয়ে ৬ টি উইকেট নিয়েছেন। তাছাড়া খুররাম শাহদাজ ২ টি,  শাহীন শাহ আফ্রিদী ১ টি আর ফাহিম আশরাফ ১ টি উইকেট  নিয়েছেন।

জবাবে পাকিস্তান নিজেদের প্রথম ইনিংসে সুবিধা করতে পারেনি। ২৭১ রানেই গুটিয়ে গিয়ে বড় হারের শঙ্কায় আছে পাকিস্তান। অথচ আসাদ সফিক আর ইমাম উল হক ওপেন করতে নেমে ভাল শুরুই করেছিলেন। দুইজনই লাথান লায়নের বলে আউট হওয়ার আগে আসাদ শফিক ৪২ আর ইমাম উল হক ৬২ রান করে আউট হন।

বাবর আজমের পর অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেয়া শান মাসুদ নিজের অধিনায়কত্বের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংস স্বরনীয় করে রাখতে পারেননি। মাত্র ৩০ রান করেই মিশেল স্টার্কের বলে অ্যালেক্স ক্যারিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। পরে চারে নামা খুররাম শাহজাদ মাত্র ৭ রান করেই প্যাট কামিন্সের বলে বোল্ড হয়ে দলের বিপদ বাড়িয়ে যান। পাকিস্তানের সববেয়ে বড় ভরসার জায়গা বাবর আজম ও মাত্র ২১ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে পাকিস্তানের ইনিংসের ভবিষ্যৎ মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। 

পরে সাউদ সাকিল আর আগা সালমানের দুটি ২৮ রানের ইনিংসে ২৭১ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জয়ের যে স্বপ্ন লালন করেছিল পাকিস্তান তা আপাতত থমকে গেছে। শান মাসুদের নেতৃত্বাধীন দল নতুন কিছু করে দেখাবে, সেই স্বপ্ন পাকিস্তান দেখলেও তা বাস্তবে রুপান্তরিত হয়নি। তবে, ২য় ইনিংসে অনবদ্য কিছু করে হার ঢেকানো গেলে সেটাই হবে পাকিস্তানের বড় প্রাপ্তি। 

অপরদিকে, ২১৬ রানে এগিয়ে থেকে পাকিস্তানকে ফলো অনে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানকে আবারো ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সুযোগ থাকলেও তা কাজে না লাগিয়ে নিজেরা ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। ২ উইকেটে ৮৪ রান করে তৃতীয় দিন শেষ করা অস্ট্রেলিয়া ৩০০ রানের লিড পেয়েছে। তবে, ৫ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতে বিপদেই পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

প্রথম ইনিংসে ১৬৪ রান করলেও ২য় ইনিংসে কোন রান না করেই খুররাম শাহজাদের বলে আউট হয়ে ফিরে যান ডেভিড ওয়ার্নার। তাছাড়া মারনাস লাবুশানেকেও মাত্র ২ রানে ফিরিয় দেন খুররাম শাহজাদ। তবে সেই চাপ বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারেনি পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত ৮৪ রান করে আর কোন উইকেট না দিয়েই তৃতীয় দিনটা পার করে অস্ট্রেলিয়া।

তৃতীয় দিন শেষে ওসমান খাজা ৩৪ আর স্টিফ স্মিথ ৪৩ রানে ক্রিজে আছেন। আগামীকাল দ্রুত স্কোরবোর্ডে রান যোগ করে পাকিস্তানের সামনে রানের পাহাড় দাঁড় করাতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া। বর্তমান অস্ট্রেলিয়া যে অবস্থানে রয়েছে সেখান থেকে পাকিস্তানকে রানের চাপে চাপা দেয়া অসম্ভব কিছু নয়। রানের প্রেসার টা পাকিস্তান দলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে মাঠেই বোঝা যাচ্ছে। 

মূলত, বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর পাকিস্তান ক্রিকেটের ক্রিকেট ম্যানেজমেন্টে বড় ধরনের রদ বদল হয়েছে। এমনকি নিয়মিত অধিনায়ক বাবর আজম নিজেকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি, পুরো পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকেই নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে।যার সংযোজন শান মাসুদের অধিনায়কত্বে সংযোজন। 

বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করা পাকিস্তান সেমিফাইনালেই উঠতে ব্যর্থ হয়। যেখানে বাবর আজমের অধিনায়কত্ব নিয়েও অনেক সমোলোচনা হয়। বাবর আজম অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলের হয়ে পারফর্ম করতে ব্যর্থ হন। যার প্রভাবে বিশ্বকাপে ভরাডুবির মাধ্যমে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করে পাকিস্তান। দায়িত্ব পাওয়া শান মাসুদ এখন পর্যন্ত সফল না হলেও, দীর্ঘ সময় শান মাসুদকে সময় দিতে চায় পাকিস্তান। 

অন্যদিকে, বিশ্বকাপ শুরুর সময় অস্ট্রেলিয়াকে চ্যাম্পিয়নের কাতারে অনেকে না দেখলেও, তাদের ধারণাকে ভূল প্রমান করেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের মাটিতে ভারতকে কাঁদিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। যা তাদের ক্রীড়া ইতিহাসের সেরা অর্জন মনে করেন সাবেক এবং বর্তমান ক্রিকেটাররা। প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন দলটি নিজেদের ক্রিকেট প্রফেশালিজমকে ফুটিয়ে তুলেছে এবারের বিশ্বকাপে। 

তবে, অতীত ভুলে দুই দলই বর্তমানকে সামনে এনে নিজেদের সেরাট দেয়ার জন উদগ্রীব হয়ে আছে। দল হিসেবে একে অপরকে সম্মান দেখালেও মাঠের ক্রিকেটে এক চুলও ছাড় দিতে চাইবে না কোন দল। তবে, অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন বরাবর উপ মহাদেশীয় দলগুলোর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জের জায়গা। যা বাবর আজমরা নিজেরাও ভাল করে জানেন। যেখানে ভাল কিছু করতে গেলে নিজেদের সেরাটা বের করে আনতেই হবে পাকিস্তানকে। 

অন্যদিকে, এই টেস্ট সিরিজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিতে চলেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। ডেভিড ওয়ার্নারের ঘরের মাঠ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকেই অবসর নিশ্চিত করবেন ওয়ার্নার। ওয়ার্নারের শেষ টেস্ট সিরিজ জয় দিয়ে ওয়ার্নারকে উৎসর্গ করতে চায় অস্ট্রেলিয়া। যেটা হলে ডেভিড ওয়ার্নারের জন্য বাড়তি প্রাপ্তি হবে। এর আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালের আগে অবসর নিতে চাইলেও তা নেয়া হয়নি ওয়ার্নারের।

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড চাইছে, মোটামুটি সংবর্ধনা দিয়ে ডেভিড ওয়ার্নারকে বিদায় জানাতে। যা নিয়ে কিছুদিন আগে মিশেল জনসন প্রশ্ন তুলেছিলেন।তার মতে, আইসিসির নিয়ম ভেঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়া ক্রিকেটারকে সংবর্ধনা দেয়া বাড়াবাড়ি।এই মতামতের কারনে এই সিরিজে ধারাভার্ষ প্যানেল থেকে সরিয়ে দেয়া হয় জনসনকে। বিশ্বকাপ জয়ের পর এমন সংবর্ধনা দিয়ে বিদায় ওয়ার্নারকে আনন্দিত করবে। 

পার্থের পর মেলবোর্ন আর সিডনি টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ভারতের ম্যাচ দিয়ে এই সিরিজ শেষ হবে। এখন পর্যন্ত ভাল অবস্থানে না থাকলেও পাকিস্তানের সামনে যথেষ্ঠ সুযোগ থাকছে ঘুরে দাঁড়ানোর। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর কাজটা মোটেও সহজ হবে না পাকিস্তানের সামনে। এতে দ্বিমত করার সুযোগ নেই পাকিস্তানেরও।

One thought on “পার্থ টেস্টে হার দেখছে পাকিস্তান দল

মন্তব্য করুন