অভিভাবকহীন বাংলাদেশের ক্রিকেট

cricettoday
ছবি: অনলাইন

বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অভিভাবকত্বের সংকটে পড়েছে। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনও বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় ধরে দলকে সামলানো সাকিব আল হাসানও বর্তমানে ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না। তিনি নিজেও ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারনায়। তামিম ইকবাল খানও বিভিন্ন ইস্যুতে দলের সাথে নেই। আর, চান্দিকা হাথুরুসিংহে আর মিনহাজুল আবেদিন নান্নু নিজেদের বাঁচাতে লড়ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অভিভাবকহীন বলাই যায়।

আগে নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেটের নানা ইস্যু নিয়ে মুখ খুললেও এখন কোন কথা বলতেই রাজি হচ্ছেন না। এমনকি, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবিতেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন পাপন। তাছাড়াও, বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে বিশ্বকাপ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিজেও নাজমুল হাসান পাপনকে মিডিয়ার সামনে কম কথা বলার বিষয়ে মতামত জাানিয়েছিলেন। পাপন সাকিব আল হাসানের কথা রেখেছেন। 

তবে, নাজমুল হাসান পাপন এমন সময় মুখে কুলুপ আটলেন, যে সময়ে তার স্টেটমেন্ট সবচেয়ে বেশি জরুরী ছিল। ২০২৭ সালে বিশ্বকাপ লক্ষ্যের কথা বললেও, তিনি নিজে আর এক বছর বিসিবিতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। তাই যদি হয়, তবে ২০২৭ সালের লক্ষ্যে পূরনের দায়িত্বই বা কার কাঁধে দিয়ে যাবেন। যাকে দিবেন তাকে কি বলতে পারবেন ২০২৭ বিশ্বকাপ আমরা চাই। 

cricketbd
ছবি: অনলাইন

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর, ব্যর্থতার দায়ভার নিতে চাননি হেড কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে আর মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। হাথুরুসিং বলেই দিয়েছেন তার মুল কাজ শুরু হবে বিশ্বকাপের পর। বিশ্বকাপ শেষ, তার কাজ হয়তো শুরু হয়েছে। তবে তা দলে টিকে থাকার। এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে নাসুম আহমেদকে বিশ্বকাপে ম্যাচ চলাকালীন চড় মেরে বসেছিলেন তিনি। যে বিষয়টি সুরাহা না করে ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা চলমান। এরই মধ্যে নাসুমকে বিষয়টি নিয়ে বেশি নাঁড়াচাড়া করতে  না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। 

যেখানে বিসিবির দায়িত্ব ছিল ঢাল হয়ে নাসুমকে সমর্থন করে পদক্ষেপ নেয়ার। সেখানে, নাসুমকে থামিয়ে চান্দিকা হাথুরুসিংকে ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বিসিবি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ না হওয়ায়, ক্যারিয়া বাঁচাতে সব কিছু চেপে যেতে চাইছেন নাসুম আহমেদ। তিনি নিজেও হয়তো বুঝতে পেরেছেন, বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করলে ক্ষতিটা তারই। বিসিবির প্রফেশনালহীন কর্মকান্ডে নির্বাক নাসুম যেন বাস্তবতার কাছে হেরে গিয়ে বাস্তবতাই মেনে নিতে চাইলেন।

অপরদিকে, নাসুমের সাথে থাপ্পড় কান্ডের পর, কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের প্রতি ক্ষোভ থাকলেও প্রতিবাদের কন্ঠস্বর তুলতে নারাজ সবাই। বর্তমানে দলে থাকা প্রত্যেকটি খেলোয়াড় দলের জন্য অটো চয়েজ না হওয়ায়, ক্যারিয়ার বাঁচাতে কথা বলছেন না কেউ। অথচ, সতীর্থদের কাছ থেকেই এই সময়টা নাসুমের প্রতি বড় সমর্থন আশা উচিত ছিল ক্রিকেটারদে। তাছাড়া, বাংলাদেশ দলের অবস্থা এতটাই নাজুক যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিমরাও টিকে থাকার আতঙ্কে থাকছেন। মুশিফিকুর রহিম অবশ্য নিজেও বিপিএলে একবার নাসুমকে মারতে গিয়ে সমোলোচিত হয়েছেন।

bangladesh cricket
ছবি: অনলাইন

অপরদিকে, বাংলাদেশ ক্রিকেট এমন একটা অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, হাই প্রোফাইন কোন বিদেশী স্টাফ, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন না। আর সেই সুযোগটার সদ্বব্যবহার করছেন হাথুরুসিংহে। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্টের যেকোন ডিসিশন নেয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রথান অবদান থাকছে চান্দিকার। যার প্রতিফলন দেখা গেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজের দল নির্বাচনে। 

ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনরকম পারফরম্যান্স ছাড়াই দলে ঢুকে গেছেন সৌম্য সরকার। হাথুরুসিংহের প্রিয় ছাত্র হওয়ায় মূলত দলে ফিরছেন সৌম্য। অথচ, ঘরোয়া ক্রিকেটেও তাকে ছাড়াই একাদশ সাজিয়েছিল তার দল। তাছাড়াও হাথুরুসিংহের অপছন্দ হলে ভাল পারফরম্যান্সও যথেষ্ট হয় না দলে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকলেও, নিউজিল্যান্ড টুরে নাম নেই নাসুম আহমেদের। পাশাপাশি, সিলেট টেস্টে দশ উইকেট নেয়া তাইজুল ইসলামকেও ব্যক্তিগত ভাবে পছন না হওয়ায় দলে নেই বলে মনে করা হচ্ছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পালন করতে আসা চান্দিকা হাথুরুসিংহের দল গঠন গুলো হচ্ছে অবাক করার মত। বয়স ভিত্তিক দল থেকে শুরু করে জাতীয় দল নির্বাচন কোন কিছুই পক্ষে যাচ্ছে না বাংলাদেশর। ব্যক্তিগত চাহিদ থেকেই যাকে তাকে এখানে ওভানে খেলাচ্ছেন। নেই কোন সুদুরপ্রসারী দিক নির্দেশনা। দল নির্বাচনে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখানো হাথুরুসিংহে যেন নিজেই এখন দিশাহীন। সর্বশেষ কয়েক মাসে যত জন খেলায়াড়কে তিনি খেলিয়েছেন তা স্বল্প সয়ে দলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারদের রেকর্ড কিনা ঘেটে দেখতে হবে। 

শুধু জুনিয়র নয় হাথুরুসিংহের কাছে ভাল না লাগায় তামিম ইকবাল আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মত খেলোয়াড়দের বসে থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। তামিম ইকবালকে তো কাঁদিয়েই ছেড়েছেন তিনি। যে অভিমানে রয়েছেন তাতে করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর কখনো ফিরবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। প্রথানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরও তামিম ইকবালকে বাদ দেয়ার যে প্রয়াস তা সাকসেস।

bangla tiger
ছবি: অনলাইন

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মত দেশে বড় পরিবর্তন আনলেও, বাংলাদেশের যেন কেউ ব্যর্থ নন। কোন পদ থেকেই সরানো যায়নি কাউকেই। সবার পারফরম্যান্সের যা অবস্থা তাতে কেই বা কাকে সরাবেন। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর মিনহাজুল হাসান নান্নু সরে যাওয়ার গুঞ্জন থাকলেও তা গুঞ্জনেই থেকে গেছে। অপরদিকে, ক্রিকেটীয় উন্নয়নের নানা রকম গাল-গল্প শুনালেও আদৌ তার ছিঁটে ফোঁটা হয়নি। ক্রিকেট  ছড়াতে পারেনি দেশজুড়ে। নেয়া হয়নি প্রতিদ্বন্দিতামূলক কোন ঘরোয়া ক্রিকেটের। 

অপরদিকে, কুল কিনারা খুঁজে না পেলেও, বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা নিজেদের ‍উন্নতি নিজেরাই করবেন বলে যেন প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফেলেছেন। মাহমুদুল হাসান জয, জাকির হোসেনরা নিজেরা নিজেদের কে নিয়ে কাজ করছেন্। ক্রিকেট শেখানোর অথবা পিঠ চাপড়ে সাহস দেয়ার মত যেন কেউ নেই। এটা বলার যেন কেউ নেই, তোমার মত করে খেল, ভালো কিছু হবে। দু:সময়ে পাশে থাকার মত কাউকেও পাচ্ছে না দলটি। নির্যাতনের স্বীকার হয়েও তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে অপলক দৃষ্টিতে। 

তবে, বর্তমানে যে সংকট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের, তা সহজে দুর হওয়ার বিষয় নয়। কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচকের বিচক্ষনাতা ছাড়া সহজ সমাধান নেই। ক্রিকেট ভাল বোঝে, দায়িত্ববান ক্রিকটীয় ম্যানেজমেন্ট পারে সংকট মোকাবেলা করতে। তবে, সিন্ডিকেট হওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে তা কত দিন পর হবে তা উপরওয়ালাই হয়তো ভাল জানেন। আমরা শুধু প্রার্থনা কর যাই ভাল কিছুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *