ভারতের হার আর অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয়ের স্বপ্ন

Auswin
ছবি: সংগৃহীত

টানা দুই ম্যাচ জয়ের পর তৃতীয় ম্যাচে ভারতের হার অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দুদলের মধ্যকার ৫ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুটি ভারত জিতে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গিয়েছিল। তবে, তুমুল উত্তেজনাকর তৃতীয় ম্যাচে ম্যাক্সওয়েলের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ফলে, অস্ট্রেলিয়ার সামনেও এখন সিরিজ জয়ের পথ খোলা থাকল।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
ভারত-২২২/৩ (২০), ঋতুরাজ গাইকাট-১২৩ (৫৭), সূর্যকুমার যাদব-৩৯ (২৯),
জ্যাসন বেহরেনড্রফ-৪-১২-১,
অস্ট্রেলিয়া-২২৫/৫ (২০), 
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল-১০৪ (৪৮), ট্রাভিস হেড-৩৫ (১৮),
রবি বিষ্ণয়-৪-৩২-২

আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে  ৩ উইকেট হারিয়ে ২২২ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। বিশ্বকাপ জয়ের পর পরই সিরিজ খেলতে থাকা ক্লান্ত অস্ট্রেলিয়ার কাছে লক্ষ্যটি সহজ ছিল না। কিন্তু, ম্যাক্সওয়েলের কাছে তো যেকোন টার্গেটই মামুলী। উইকেটে টিকে গেলে বিপক্ষ দলগুলোকে ম্যাক্সওয়েল শো দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। 

ওপেন করতে নেমে জাসওয়াভি জাসওয়াল ৬ বলে ৬ রান করে আউট হলেও, ওপেনিং সঙ্গী ঋতুরাজ গাইকাট ৫৭ বলে ১২৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। ইন্ডিয়া দলের ওপেনিং পজিশনে জায়গা পেতে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতা থাকায় এরকম সেঞ্চুরির পরেও নিয়মিত দলে জায়গা পাওয়া মোটেও সহজ হবে না গাইকাটের জন্য। 

অপরদিকে তিন নম্বরে ব্যাট করা ঈশান কিশান এ ম্যাচে ৫ বল খেলেও কোন রান না করেই ফিরে যান। কিশান সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ দলের স্কোয়াডে থাকলেও খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তবে, আজকের ম্যাচে খারাপ করলেও নির্বাচকের সুনজরে আছেন ঈশান কিশান। ভারত দলে নিয়মিত হতে এখনো ধুঁকছেন তিনি। মূলত তার ব্যাটিং পজিশনে বেশ কিছু তারকা খেলোয়াড় ভারতীয় দলে থাকায় দলে নিয়মিত হওয়া তাঁর জন্য অনেক কষ্টকর।

অপরদিকে, অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ২৯ বলে ৩৯ রান করে অ্যারন হার্ডির বলে আউট হয়ে ফেরেন। পাশাপাশি, ভারতীয় নির্বাচকের নজরে আসা তিলক ভর্মা ২৪ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত থাকেন। ঋতুরাজ গাইকাট ছাড়া বাকিরা খুব বেশি হার্ট হিট নিতে না পারলেও বড় স্কোর বানাতে সমস্যা হয়নি ভারতের। 

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বেহরানড্রফ ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে ১  টি ‍উইকেট নেন। অপরদিকে, অ্যারন হার্ডি ৪ ওভার বোলিং করে ১ টি উইকেট নিলেও ৬৪ টি রান খরচ করেন। আরেক পেসার কেন রিচার্ডসন ৩ ওভার বোলিং করে ১ টি উইকেট নিয়েছেন। বেহরানড্রফের অনবদ্য স্পেলের সুবাধে ভারতকে ২৫০ রান থেকে দুরে রাখত পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। 

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ট্রাভিস হেড ভাল সূচনা এনে দেন। ওপেনার হিসেবে নামা অ্যারন হার্ডি ১২ বল খেলে আউট হলেও ট্রাভিস হেড ১৮ বলে ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আউট হন। ট্রাভিস হেড বিশ্বকাপ ফাইনালে বলতে গেলে একাই ভারতের কাছ থেকে ম্যাচ বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফাইনালে ১৩৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলার পাশাপাশি রোহিত শর্মার অবিশ্বাস্য একটি ক্যাচ লুফে নিয়েছিলেন তিনি। যা ফাইনালের টার্নিং পয়েন্টের একটি ধরা হয়।

তবে, প্রথম টি-টোয়েন্টির সেঞ্চুরিয়ান জশ ইংলিশ এই ম্যাচে ভাল করতে পারেননি। ৬ বলে ১০ রান করে রবি বিষ্ণয়ের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। জশ ইংলিশ প্রথম ‍টি-টোয়েন্টিতে ৫০ বলে ১১০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন। তবে, দু:খজনকভাবে সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ২ উইকেটে হারতে হয়েছিল ভারতের কাছে।

২২৩ রানের লক্ষ্যে তাড়া করতে ম্যাক্সওয়েলের ওপর ভরসা রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাক্সওয়েল সেই ভরসার প্রতিদান দিয়ে ৪৮ বলে ১০৪ রান করেছেন। তাঁর এই অবিশ্বাস্য ইনিংসের কারনে শেষ বলে এসে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস ৮টি ছয় আর ৮টি চারের মার ছিল।

ম্যাক্সওয়েলের অনবদ্য ফিনিসের দিনে মার্ক স্টয়নিস দলের চাপ বাড়িয়েছিলেন। ২১ বলে ১৭ রান করে দলকে বিপদেই ফেলে গিয়েছিলেন তিনি। ভাগ্য সহায়ক হওয়ায় ম্যাক্সওয়েলের বদৌলতে এ যাত্রায় বেঁচে যায় অস্ট্রেলিয়া। মার্ক স্টয়নিস বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছিলেন। তবে, চলমান সিরিজে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি স্টয়নিস।

অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট খ্যাত টিম ডেভিড এই ম্যাচে গোল্ডেন ডাকের শিকার হন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ম্যাচ জেতাতে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছিলেন ম্যাথু ওয়েড। ছোট হলেও ১৬ বলে ২৮ রানের এক কার্যকরী ইনিংস খেলেন ওয়েড। পাশাপাশি, শেষ ওভারে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ন সময়ে ম্যাক্সওয়েলকে স্ট্রাইকিং এ পাঠিয়ে সুনাম কুঁড়িয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ২০ ওভার খেলে ৫ উইকেট হারিয়ে ৫ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে।

ভারতের হয়ে রবি বিষ্ণয় ৪ ওভার বোলিং করে ৩২ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন। অপরদিকে, আর্শদীপ সিং, আভেশ খান আর অক্সার প্যাটেল ১ টি করে উইকেট নিয়েছিন। তবে, প্রসিধ কৃষ্ণা শেষ ওভারে ২১ রান দিয়ে ভিলেন বনে গেছেন। ভারত মূলত হেরে গেছে কৃষ্ণার বোলিংয়েই। এই ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে ৬৮ রান দিয়ে উইকেট শূন্যে ছিলেন কৃষ্ণা।

পাঁচ ম্যাচ সিরিজে এখনো ভারত ২-১ এ এগিয়ে থাকলেও সর্বশেষ ম্যাচে জয় অস্ট্রেলিয়াকে বাড়তি অনুপ্রেরনা দিচ্ছে। সিরিজের বাকি ২ টি ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতে ঘরে ফিরতে চায় অস্ট্রেলিয়া। অপরদিকে, বাকি দুই ম্যাচের একটিতে জিততে পারলেই সিরিজ ট্রফি ভারতের হাতে উঠবে। যা কিছুটা হলের বিশ্বকাপের গ্লানি মুছতে সাহায্য করতে পারে। তবে ভারত বাকি দু ম্যাচের দুটিতেই জয়ের বিষয়ে বেশ আত্নবিশ্বাসী।

বিশ্বকাপের পর দুদলের বেশ কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ন খেলোয়াড় বিশ্রামে থাকায় পাইপ লাইনে থাকা খেলোয়াড়দের ঝালিয়ে নিচ্ছে দুদল। তুমুল প্রতিদ্বন্দিতামূলক সিরিজে দু দলেরই বেশ কিছু খেলায়াড় ভাল পারফর্ম করে নির্বাচকদের সুনজড়ে এসেছেন।

আগামী শুক্রবার রায়পুর দুদলের মধ্যকার চতুর্থ টি-টোয়েন্টি টি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সময় ৭:৩০ মিনিটে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ন এই ম্যাচে তুমুল প্রতিদ্বন্তিতার মাধ্যমে দুদল জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দুদলের মধ্যে শ্রেষ্টত্ব বজায় রাখার লড়াই বেশ জমে উঠেছে। বিশেষ করে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর দুদলের মধ্যে মাঠ এবং মাঠের বাহিরে লড়াই এখন ট্রেন্ট বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বকাপে ভারতের হারে পুরো দেশজুড়ে শোকের মাতম পড়েছিল। ভারতীয় দলকে সান্ত্বনা দিতে নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত রোহিতদের ড্রেসিং রুমে গিয়েছেলেন। ঠিক যাদের কারনে এই বিষাদ, তাদেরকে দ্রুত সময়েই কাছে পেয়ে সিরিজ জিতে জ্বালা কিছুটা নেভাতে চাচ্ছে ভারত। যার সুবাদে ক্রিকেট বিশ্ব কিছু উত্তেজনাকর ম্যাচের স্বাক্ষী হতে পারছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *